দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা এসে গেলেও স্বস্তি নেই। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে এল নিনো বেশি শক্তিশালী হতে পারে এবং এর ফলে বৃষ্টিপাত কম হবে আর ফসলের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পর্বে পড়তে পারে সামগ্রিক ভারতীয় অর্থনীতিতে।
গত সপ্তাহে RBI গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন যে দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে ঠিক পথেই চললেও যে কয়েকটি ঝুঁকি সামনে রয়েছে তার মধ্যে এই নিনো প্রভাব অন্যতম। তার মাসিক রিপোর্টে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) বলেছে যে প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত এল নিনোর অবস্থা ধীরে ধীরে শীতকালে শক্তিশালী হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়ার জন্ম দিতে পারে। এর ফলে ভারতে বর্ষা দুর্বল হতে পারে। “তার শক্তির উপর নির্ভর করে, এল নিনোর প্রভাবের একটি পরিসীমা হতে পারে, যেমন বিশ্বজুড়ে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত এবং খরার ঝুঁকি বাড়ায়,” বলেছেন ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারের জলবায়ু বিজ্ঞানী মিশেল ল’হিউরেক্স৷
“জলবায়ু পরিবর্তন এল নিনোর সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে বা প্রশমিত করতে পারে৷ উদাহরণস্বরূপ, এল নিনো নতুন রেকর্ড তাপমাত্রা তৈরী করতে পারে. বিশেষ করে এমন অঞ্চলে তা ঘটতে পারে যেখানে ইতিমধ্যেই এল নিনোর সময় গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে৷” জানিয়েছন তিনি।
ভারতে দেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বর্ষা হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে। এর ফলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষিকাজ এবং জলাধার-জলাশয়গুলি ভর্তি করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে। ভারতে চাষের জমির অর্ধেকের বেশি বৃষ্টিনির্ভর এবং কৃষি কাজে দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করেন। নীতিনির্ধারকরা তাই বর্ষা এবং এল নিনোর মতো প্রভাবের ওপর শ্যেনদৃষ্টি রাখেন।
“যদি চলতি আর্থিক বছরে এল নিনো ভারতে বর্ষার ওপর প্রভাব ফেলে তাহলে এর প্রভাব অনুভূত হবে কৃষি ছাড়াও একাধিক ক্ষেত্রে। আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস, মুনাফা কমিয়ে দেবে এবং ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। দেশে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে,” রেটিং এজেন্সি ICRA মে মাসে এল নিনোর প্রভাব সম্পর্কে এ কথা বলেছিল।
যদিও বর্ষার সামান্য বিলম্বের প্রভাব বোরো চাষে কিছু হবে না। এল নিনোর প্রভাবে কৃষি উৎপাদন এবং গ্রামাঞ্চলে আয় মার খেতে পারে। যে শিল্পগুলি ক্রিস উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল সেগুলি বেশি প্রভাবিত হতে পারে। এগুলি হল- ভোজ্য তেল, চিনি, তুলা, স্পিনিং মিল। যে শিল্পগুলি গ্রামাঞ্চলের আয়ের ওপর নির্ভরশীল যেমন ট্রাক্টর, টু-হুইলার এবং সিমেন্ট, সেগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রধান অর্থনীতিবিদ মদন সাবনভিস বলেছেন, “এল নিনো প্রভাবের আশঙ্কা আছে এবং দাক্ষিণাত্যে এর প্রভাব বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডাল, তুলো এবং তৈলবীজে এই ঝুঁকি বেশি। দেশের পশ্চিম উপকূলে (বর্ষার) আগমন এবং বৃষ্টির অগ্রগতি দেখতে হবে”।
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগ এপ্রিল মাসে মাসিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছিল যে অনিশ্চিত আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি হতে পারে। “এল নিনোর প্রভাবের প্রতি সংবেদনশীল পণ্যের দাম, যেমন কফি, চাল, পাম তেল এবং প্রাকৃতিক রাবার-এর দিকে ক্রমাগত নজর দেওয়া প্রয়োজন,” বলা হয়েছিল সেই রিপোর্টে।
অতীতে এল নিনোর প্রভাব যখন বেশি হয়েছে তখন ভারতে গড় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। কখনও কখনও তীব্র খরা হয়েছে যা ফসল ধ্বংস করেছে। এতে কিছু শস্যের রপ্তানি কমাতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
এই বছরের শুরুতে, ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী ঋতুর দ্বিতীয়ার্ধে, অর্থাৎ আগস্টের মধ্যে একটি এল নিনোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ভারতের অভাব দফতর বলেছে যে এল নিনোর কারণে ভারতের উত্তর-পশ্চিমে জুন-সেপ্টেম্বর মরশুমে স্বাভাবিকের চেয়ে 8% কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
1951-2021 সময়ের মধ্যে ১৫-টি এল নিনো বছরের মধ্যে নয় বছর বর্ষায় ঘাটতি হয়েছিল। এটি ইঙ্গিত করে যে এল নিনোর সঙ্গে ভারতে কম বৃষ্টিপাতের একটা সম্পর্ক রয়েছে। 2016 সালে এল নিনোর কারণে বিশ্বে রেকর্ড গরম পড়েছিল।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App