রাহুল দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিলেন। তিনি মনে মনে নিজেই ভাবছিলেন, মাত্র কয়েকমাস আগেই অনেকগুলো টাকা খরচ করে তিনি দেওয়াল রঙ করিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে দামি পেইন্ট ব্যবহার করেছিলেন। তারপরেও কী সব ঘটনা ঘটল!
কন্ট্রাক্টর রাহুলকে বলেছিলেন যে এটি 3-4 বছর টিকে যাবে। বাস্তবে এটা 6 মাসও টেকেনি। এখন রাহুল ভাবছেন তার ঠিকাদারকে বিশ্বাস করা উচিত হয়নি। সে ঠিকাদারের কথায় ফেঁসে গেল। এখন সে ঠিক করেছে নিজেই ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে আবার দেওয়ালে রং করাবে।
রাহুল তার ল্যাপটপ খুলে একটি ভিডিও দেখতে বসে। পেইন্ট বা রঙ করা নির্মাণের শেষ পর্যায়। এটা শুধু ঘরকে সুন্দর দেখায় না, আবহাওয়া থেকেও রক্ষা করে। পেইন্ট সবসময় আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। কারণ রং আমাদের মুড এবং আবেগের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সেজন্য পেইন্টের সঠিক নির্বাচন করে আপনার স্বপ্নের বাড়ি রং করার সঠিক উপায় জানাও গুরুত্বপূর্ণ !
পেইন্ট করার আগে বিশদ পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কারণ এতে অনেক ধরনের খরচ জড়িত থাকে। যেমন পেইন্ট, পুট্টি, প্লাস্টার অফ প্যারিস এবং শ্রমের খরচ। আপনি বাড়ির কয়টি অংশেই রং চান এবং কী ধরণের পেইন্ট ব্যবহার করতে চান তাও পরীক্ষা করা উচিত। কারণ শুধুমাত্র তখনই আপনার কাছে ব্যবহারযোগ্য উপকরণ, শ্রমের খরচ এবং আপনার ঘর রঙ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের একটি অনুমান থাকবে। তবেই আপনি আপনার বাড়ি রং করার আসল খরচ জানতে পারবেন।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে আপনার এলাকার আবহাওয়া অনুযায়ী রং বেছে নেওয়া জরুরি। বাজারে অনেক ধরনের পেইন্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে হোয়াইট ওয়াশ, ডিস্টেম্পার পেইন্ট, অয়েল পেইন্ট, সিমেন্ট পেইন্ট, ইমালসন পেইন্ট, এনামেল পেইন্ট এবং লাস্টার পেইন্ট।
হোয়াইট ওয়াশ পেইন্টিংয়ের একটি পুরানো এবং সস্তা উপায়। এটিতে চুন ব্যবহার করে করা হয়। তবে এর ফিনিশিং মসৃণ নয়। এছাড়াও, এটি খুব টেকসই নয় এবং দাগ মোছা খুব কঠিন।
বাড়ির দেওয়ালের রং শুধুমাত্র বাইরে থেকে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায় না বরং বৃষ্টি, ঝড় এবং সূর্যের আলোও প্রতিরোধ করে। বাইরের দেওয়ালে সিমেন্ট পেইন্ট বা ইমালসন পেইন্ট ব্যবহার করুন। ইমালসন পেইন্ট দেওয়ালে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দ্রুত শুকিয়ে যায়। শুধু তাই নয় এটি সমস্ত আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। বাজেট কম হলে সিমেন্ট পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন বা হোয়াইট ওয়াশ করাতে পারেন। বর্তমানে, আপনি বাজারে অনেক সংস্থার বিভিন্ন ধরণের বাহ্যিক পেইন্ট পাবেন যা আপনি আপনার বাড়ির দেওয়ালের বাইরের দিকে লাগাতে পারেন।
পেইন্টিংয়ের আগে দেওয়ালগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন যাতে ধুলো এবং ময়লা দূর হয়। দেওয়াল সিল করার জন্য পরীক্ষা করুন। পেইন্টিং করার আগে, নিশ্চিত করুন যে দেওয়ালে কোন ঢেউ বা অমসৃণতা নেই। আর তা থাকলে পুট্টি দিয়ে সমান করে নিন। অন্যথায়, পেইন্ট যতই ব্যয়বহুল হোক না কেন ফিনিশিং মসৃণ হবে না। কিছুক্ষণ পরে, ফাটল দেখা দিতে শুরু করবে।
সর্বদা অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ দেওয়ালের ভিতরে ধোয়া যায় এমন পেইন্ট ব্যবহার করুন। এতে দেওয়ালের সৌন্দর্য অটুট থাকবে। কারণ দেওয়ালের ভেতরের দাগ সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এটি আপনার দেওয়াল বারবার রং করার খরচ বাঁচায়। ঘরের দেওয়ালের জন্য আপনি তেল রং, প্লাস্টিক পেইন্ট বা ইমালসন পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন। চকচকে এবং প্রিমিয়াম লুকের জন্য, আপনি এনামেল এবং লাস্টার পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলো একটু ব্যয়বহুল। আপনার বাজেট কম হলে ডিস্টেম্পার ব্যবহার করতে পারেন।
রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘরের আকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছোট ঘরে, আপনার গাঢ় রঙের পরিবর্তে হালকা রঙের রং ব্যবহার করা উচিত। এটি ঘরটিকে আরও বড় দেখায়। আপনি বাল্ক পেইন্ট কেনার আগে নমুনা পরীক্ষা করুন। আপনি যে আলো ব্যবহার করেছেন সেই অনুযায়ী রঙটি ঘরে মানায় কিনা তা দেখুন। রঙ নির্বাচনের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন যাতে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আসবাবপত্র, ওয়ারড্রোব, ফ্লোর টাইলসের কথা মাথায় রেখে রং বেছে নিন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, আপনার নিশ্চিত হওয়া উচিত যে আপনি অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে যে পেইন্ট ব্যবহার করবেন তাতে সীসা এবং ক্যাডমিয়ামের মতো ন্যূনতম রাসায়নিক যৌগ নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় এই রাসায়নিকগুলি শরীরে যায় এবং আপনার স্বাস্থ্যর ক্ষতি করে। আপনি ক্যান্সার এবং টিবির মতো রোগের শিকারও হতে পারেন। পেইন্ট বক্সে রাসায়নিক তথ্য লেখা থাকে। তাই কেনার আগে তা ভালো করে দেখে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আজকাল ঘরে রঙের পরিবর্তে ওয়ালপেপারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাদের খরচ কম এবং আপনি যখনই চান পরিবর্তন করার স্বাধীনতা আছে। একটি দেওয়াল হাইলাইট করতে টেক্সচার পেইন্ট ব্যবহার করুন। এটি একটি খুব প্রিমিয়াম চেহারা দেয়। তবে এগুলোর দাম সাধারণ পেইন্টের চেয়ে অনেক বেশি। বাজেট কম হলে টেক্সচার পেইন্টের পরিবর্তে সিমেন্ট পেইন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাড়িতে রং করার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে রং বেশিদিন টিকবে এবং আপনার অর্থও বাঁচবে। আরও কিছু টিপস আছে যা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। আপনি যদি রঙটি দীর্ঘস্থায়ী করতে চান এবং ভাল ফিনিশিং করতে চান তবে একজন অভিজ্ঞ ঠিকাদার বেছে নিন। তার আগের কাজের বিষয় জেনে নিন। ভালো ফিনিশিংয়ের জন্য ব্রাশের পরিবর্তে রোলার ব্যবহার করুন। প্লাস্টার সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পরেই পেইন্ট সম্পন্ন করুন অন্যথায় ফাটল দেখা দিতে শুরু করবে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App