গত সপ্তাহেই চিনির পরিবর্তে কৃত্রিমভাবে তৈরি মিষ্টির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। ওজন কমানোর জন্য যাঁরা এর ব্যবহার করে চলেছেন তাঁরা নিজেদের অজান্তেই ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনছেন বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। অনেকদিন ধরে এই ধরনের জিনিস ব্যবহার করলে হার্ট আর রক্তনালীর রোগ হতে পারে বলেও WHO জানিয়েছিল। এমনকি টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। এমনকী মৃত্যুও ত্বরান্বিত হতে পারে বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে WHO আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
এই রিপোর্ট ঘিরে দেশজুড়ে আলোড়নের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্য়ান্ডার্স অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবাণীর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিশেষজ্ঞরা গোটা বিষয়টি ও তার ঝুঁকি খতিয়ে দেখছেন বলে FSSAI-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারখানার উৎপন্ন খাদ্যপণ্যের গুণমান নিশ্চিত করার দায়িত্ব FSSAI-এর। এই খবর জানিয়েছে বাণিজ্যিক দৈনিক দ্য ইকোনমিক টাইমস।
FSSAI-এর প্রতিনিধি সংবাদপত্রটিকে বলেছেন, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞরা এটি বিশদে খতিয়ে দেখছেন।’
সাধারণ মানুষ নন-সুগার সুইটনার বলতে স্যাকারিনকে বোঝালেও WHO বলেছে এই ধরনের নানান রাসায়নিক বাজারে বিক্রি হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে acesulfame K, aspartame, advantame, cyclamates, neotame, saccharin, sucralose, stevia এবং stevia থেকে প্রাপ্ত রাসায়নিক যৌগ।
দেশের খাদ্যপণ্য বাজারে এই শ্রেণির রাসায়নিকের ব্যপক ব্যবহার আছে। বিশেষকরে নরম পাণীয়, প্রাতরাশে যা খাওয়া হয় সেই ধরনের প্যাকেজড খাবার, ফলের রস, আইসক্রিম, কুকিজ, চবনপ্রাস ইত্যাদিতে ব্যবহার এই ধরনের রাসায়নিক।
স্বাভাবিকভাবেই WHO-র এই সতর্কবাণীতে ব্যবসায়িক বিপদের আশঙ্কা করছে দুই শ্রেণির সংস্থা। এক, যারা সরাসরি এই ধরনের রাসায়নিক বাজারে বিক্রি করে। দুই, যে ধরনের সংস্থা এই ধরনের রাসায়নিক তাদের খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করে থাকে।
দুই শ্রেণির সংস্থার আশঙ্কা যে এর ফলে তাদের বিক্রি ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে Coca-Cola, PepsoCo, Kellogg’s বা Dabur-এর মতো সংস্থা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ।
“চিনি ছেড়ে চিনি নয় এমন মিষ্টির ব্যবহার করলে ওজন কমতে সাহায্য করে না। চিনি ছাড়তে বরং উচিত প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে চিনি পাওয়া যায় তেমন খাবার খাওয়া। যেমন ফল, মিষ্টি ছাড়া খাদ্য আর পানীয় ব্যবহার করা উচিত। চিনি নয় এমন জিনিসের কোন খাদ্য গুণ নেই। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে উচিত অল্প বয়সেই খাবার থেকে মিষ্টি বাদ দিয়ে দেওয়া,” বলে মন্তব্য করেছেন WHO-এর নিউট্রেশন আর ফুড সেফটি ডিরেক্টর Francesco Branca।
এছাড়া চিনি খেলে শরীরে মেদ জমবে এই আশঙ্কা থেকে অনেকেই চিনি ছেড়ে এই ধরনের রাসায়নিকের দিকে ঝুঁকছেন। আর যেহেতু মেদ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে দ্রুতহারে এই ধরনের পণ্যের বিক্রিও হুহু করে বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে এই শ্রেণীর মিষ্টি জিনিসের বাজারের আয়তন 720 কোটি ডলারের বেশি। এদেশে এই বাজার অন্তত 200 কোটি টাকার। বেশি ও বিদেশী অনেক সংস্থা ভারতের এই বাজার ধরতে কৌশলী বিপণন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, চিনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্লাড সুগারের রোগীর বাস। ভারত দ্বিতীয় স্থানে। অন্তত 8 কোটি মানুষ মধুমেহ রোগে ভোগেন।
আরও পড়ুন: নয়া নির্দেশিকা, বাড়তে পারে পার্কিং-সহ ফ্ল্যাটের দাম
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App