UPI পেমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ার আগে ডিজিটাল ওয়ালেট ছিল অনলাইন পেমেন্টের সহজ পদ্ধতি। বর্তমানে UPI পেমেন্টের সঙ্গে ডিজিটাল ওয়ালেটের প্রতিযোগিতা চলছে। এই পরিস্থিতিতে আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে অর্থপ্রদানের এই দুটি পন্থার মধ্যে পার্থক্য কী এবং কোন কাজের জন্য কোনটি ভাল? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
UPI অর্থাৎ ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস হল একটি তাৎক্ষনিক রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেম। এখানে সরাসরি এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে লেনদেন হয়। এটি তৈরি করেছে ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন বা NPCI। অন্যদিকে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। ডিজিটাল ওয়ালেটকে ই-ওয়ালেট বা মোবাইল ওয়ালেটও বলা হয়। এর সাহায্যে আমরা অন্য যে কোনও ই-ওয়ালেট ব্যবহারকারীর ওয়ালেটে টাকা পাঠাতে পারি। ফিনটেক সংস্থাগুলি তাদের নিজ নিজ প্ল্যাটফর্মে ই-ওয়ালেট চালু করেছে। অনেক ব্যাঙ্ক ই-ওয়ালেটের সুবিধাও দিয়ে থাকে। এই সুবিধা পেতে গেলে আপনাকে ই-ওয়ালেটের সঙ্গে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে হবে। তারপরে সহজেই ই-ওয়ালেটে অর্থ যোগ করা যেতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দুটির পন্থার মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী কী-
1. ভার্চুয়াল পেমেন্ট অ্যাড্রেস এবং ID UPI-তে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে আপনার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে।
2. UPI-তে একলপ্তে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট করা যায়৷ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক তাদের নিজস্ব লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করতে পারে। অন্যদিকে, ডিজিটাল ওয়ালেটে সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা লোড করা যেতে পারে। এছাড়াও আপনি মাইক্রো ATM বা POS অর্থাৎ পয়েন্ট অফ সেলে ই-ওয়ালেট থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন৷
3. UPI লেনদেন দুটি ব্যাঙ্কের মধ্যে সঞ্চালিত হয়৷ বর্তমানে UPI প্ল্যাটফর্মে ২০০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক রয়েছে। এখন আপনি আপনার স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা স্মার্টওয়াচের সাহায্যে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারেন। ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে অর্থ প্রদানের জন্য যে ব্যক্তি অর্থ প্রদান করছেন এবং যিনি অর্থ গ্রহণ করছেন, দুজনের কাছেই ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ থাকা প্রয়োজন।
4. UPI-তে কোনো OTP-এর প্রয়োজন নেই, M-PIN দিয়ে লেনদেন করা যেতে পারে। অন্যদিকে, ডিজিটাল ওয়ালেটে এমন কোনও পিনের প্রয়োজন নেই৷
5. UPI-তে KYC-র প্রয়োজন নেই। কিন্তু ডিজিটাল ওয়ালেটে KYC ছাড়া লেনদেন করা যাবে না।
পার্থক্যগুলি জানার পরে এখন দেখা যাক কোন ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উপযুক্ত।
UPI তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ স্থানান্তর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ই-ওয়ালেটে অর্থ স্থানান্তরের একাধিক পদক্ষেপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ওয়ালেটে অর্থ স্থানান্তর এবং তারপর ওয়ালেট থেকে গ্রাহকের কাছে অর্থ প্রদান।
UPI-তে ইন্টারঅপারেবিলিটির সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যাবে এবং এর জন্য কোনও চার্জ দিতে লাগবে না। অন্যদিকে, একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে একই ডিজিটাল ওয়ালেটের দুটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে লেনদেন করা যেতে পারে।
UPI-তে অনেক রিপোর্ট এবং সতর্কতা রয়েছে। যখন একটি লেনদেন করা হয় তখন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে একটি পৃথক এন্ট্রি দেখা যায়। যে কারণে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট অনেক লম্বা হয়। অন্যদিকে একটি ডিজিটাল ওয়ালেটের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে শুধুমাত্র একটি এন্ট্রি প্রদর্শিত হবে। ক্যাশব্যাক, ভাউচার এবং পুরস্কারের কথা বলতে গেলে এগুলি ওয়ালেটে পাওয়া যায়।
এই সব বিষয় মাথায় রাখলে মনে হচ্ছে UPI আরও ভালো। কিন্তু ডিজিটাল ওয়ালেটকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রতিবেদন শেষের আগে ই-ওয়ালেট এবং UPI সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন।
1. আপনি যদি UPI পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করেন তাহলে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন। কখনোই ভুল লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। প্রতারণার কল থেকে সাবধান থাকুন এবং সর্বোপরি পিন, পাসওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ কাউকে দেবেন না।
2. পেমেন্ট এবং রিচার্জ ইত্যাদির জন্য একই ই-ওয়ালেট ব্যবহার করবেন না। বিভিন্ন ওয়ালেটে বিভিন্ন অফার থাকে অনেকে পয়েন্টও পাওয়া যায়। যা ব্যবহার করে আপনি OTT প্ল্যাটফর্ম এবং ই-কমার্স সাইটে বিনামূল্যে সাবস্ক্রিপশন পেতে পারেন।
3. আপনার সেভিংস বা স্যালারি অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে এমন অ্যাকাউন্ট থেকে UPI পেমেন্ট করুন যার স্টেটমেন্ট আপনাকে কোথাও দেখানোর প্রয়োজন নেই। বারবার UPI পেমেন্ট করলে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বড় হয়ে যায়। যদি পরে স্টেটমেন্টের প্রয়োজন হয় তাহলে তা খুব বড় হয়ে যেতে পারে। তার মর্ম উদ্ধার করা কঠিন হতে পারে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App