2023 সালের উষ্ণ আবহাওয়া নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু জানেন কি, এই বছরটি 125,000 বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হতে চলেছে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, সোয়া এক লক্ষ বছরের মধ্যে উষ্ণতম। এই রেকর্ড করা “কার্যত নিশ্চিত” বলে 8 নভেম্বর জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা।
EU-এর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (C3S) বলেছে, গত মাসে 2019 থেকে গত অক্টোবরের তাপমাত্রার রেকর্ডটি বড় ব্যবধানে ভেঙে গেছে।
C3S ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেছেন “অক্টোবরে তাপমাত্রা পুরোনো রেকর্ডের থেকে 0.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি, যা একটি বিশাল ব্যবধান।” তিনি অক্টোবরের তাপমাত্রার অসঙ্গতিকে “খুব চরম” বলে বর্ণনা করেছেন৷
এই তাপ প্রবাহের কারণ হল, মানুষের জীবনযাত্রার ফলে ক্রমাগত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, এই বছরের এল নিনোর আবহাওয়া প্যাটার্ন ইত্যাদি। এল নিনোর ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের জলকে উষ্ণ হয়। এর ফলে বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়।
যার সরাসরি প্রভাব পরে কৃষিকাজে। এ বছর যেমনটি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এ বছর খরিফ শস্যের ফলন কম হবে। তাছাড়া দেশের বড় বড় জলাধারগুলিতে জলের মাত্রা কমে গেছে, যার ফলে শীতকালীন বা রবি শস্য বপন ও ফলন, দুটি ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের বড় শিকার হয় অর্থনীতি। ভারতের কথাই ধরা যাক। বৃষ্টি কম হলে সরাসরি কৃষি মার খায়। তার হাত ধরে সবার জন্য খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। কৃষি মার খেলে গ্রামাঞ্চলে মানুষের হাতে আয় কমে। এর ফলে বৃহত্তর অর্থনীতিতে বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা কমে যায়। সামগ্রিক চাহিদা কমে গেলে মাসুষের হাতে কাজ কমে যায়। যার ফলে আর্থিক বৃদ্ধির গতি স্তিমিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা দেশ এবং বিভিন্ন দেশে তা ঘটলে ক্ষতি ছড়িয়ে পরে বিশ্বের নানা প্রান্তে।
বিশ্বজুড়ে 1850-1900 সালের অক্টোবরে গড় পৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা একই মাসের তুলনায় 1.7 ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যেটিকে কোপার্নিকাস প্রাক-শিল্প যুগ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
C3S এক বিবৃতিতে বলেছে, রেকর্ড-ব্রেকিং অক্টোবর মানে 2023 এখন সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে রেকর্ড করা “কার্যত নিশ্চিত”। আগের রেকর্ডটি ছিল 2016 – সেটিও একটি এল নিনোর বছর ছিল।
কোপার্নিকাসের ডেটাসেট 1940 সাল থেকে রক্ষিত আছে৷ “যখন আমরা IPCC-এর (Intergovernmental Panel on Climate Change) সাথে আমাদের তথ্য একত্রিত করি, তখন আমরা বলতে পারি যে এটি গত 125,000 বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর,” বার্গেস বলেছেন৷
এই দীর্ঘমেয়াদী ডেটা জোগাড় করতে বিজ্ঞানীরা বরফের কোর, গাছের রিং এবং প্রবালের মতো জিনিস বিশেষণ করে।
অক্টোবরের আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বড় ব্যবধানে তাপমাত্রার রেকর্ড দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
“সেপ্টেম্বর সত্যিই সত্যিই আমাদের বিস্মিত করেছে। তাই গত মাসের পরে, আমরা একটি নতুন জলবায়ু অবস্থায় আছি কিনা তা নির্ধারণ করা কঠিন। কিন্তু এখন রেকর্ডগুলি গণ্ডগোল করছে এবং তারা আমাকে এক মাস আগের চেয়ে কম অবাক করছে,” বার্গেস বলেছিলেন।
ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়ার জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল মান বলেছেন: “বেশিরভাগ এল নিনো বছর এখন রেকর্ড-ব্রেকার।”
জলবায়ু পরিবর্তনের চেহারা বেশি বেশি ধ্বংসাত্মক চেহারা ধারণ করছে। এ বছর লিবিয়ায় বন্যায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, দক্ষিণ আমেরিকায় তীব্র তাপপ্রবাহ হয়েছে এবং কানাডায় সবচেয়ে তীব্র দাবানল দেখা গেছে।
লিডস ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী পিয়ার্স ফরস্টার বলেছেন, “পরবর্তী দশকে দ্রুত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করে, আমরা উষ্ণায়নের হারকে অর্ধেক করতে পারি,” তিনি যোগ করেন।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App