গত কয়েক সপ্তাহে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির বিপুল বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন হওয়া সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সবজির দাম নিয়ে ততটা চিন্তিত নয়, যতটা তাদের মাথাব্যথা অপরিশোধিত তেল নিয়ে। নতুন ফসল বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে, সেপ্টেম্বরে তরিতরকারির দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি 90 ডলারের উপরে উঠে গেলে কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকার বলেই মন্তব্য করেছেন মন্ত্রকের এক আধিকারিক।
ওই আধিকারিক বর্ষার গতিবিধিতে স্বস্তি বোধ করেছেন এবং বলেছেন যে বৃষ্টিপাতে 6% ঘাটতি থাকলেও খরিফ ফসলের উপর তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। ঘটনাচক্রে, এই বছর বর্ষা দেরিতে এবং অসম ভাবে শুরু হয়েছে। জুলাই মাসে প্রচুর বৃষ্টি হলেও অগাস্ট মাসে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এল নিনোর কারণে অর্থনীতি বিঘ্নিত হতে পারে ও মুদ্রাস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আগেই।
কিন্তু অপরিশোধিত তেলের মূল্যের ওপর দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত নির্ভরতা রয়েছে কারণ ভারত তার চাহিদার প্রায় 85% অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। উল্লেখ্য, খুচরো মুদ্রাস্ফীতি জুলাই মাসে 7.44%-এ দাঁড়িয়েছে। এই সূচক মে মাসে 4.25% এবং জুন মাসে 4.81% ছিল। এই বৃদ্ধির পেছনে মূলত সবজির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিই মূল কারণ। জুলাই মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতিতে সবজির দাম 200 বেসিস পয়েন্ট অবদান রেখেছিল।
উদ্বিগ্ন হয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার তার মজুদ থেকে গম, চাল ও পেঁয়াজ ছাড়তে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে টানা চতুর্থ মাসে পাইকারি দামের ক্ষেত্রে সংকোচন (-1.36%) পরিলক্ষিত হয়েছে। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের মূল্য হ্রাসের পরে গত এক বছরে তেল বিপণন সংস্থাগুলির বিরাট লাভের পরে সরকার পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে এমন প্রত্যাশা ছিল কিছু কিছু মহলে কিন্তু অর্থমন্ত্রকের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন পেট্রল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক কমানোর আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই.
ভারত যে দামে অপরিশোধিত তেল কিনে থাকে তার দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়া সত্ত্বেও দেশে দুই প্রধান জ্বালানির খুচরো দাম এখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। সরকার পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়ালেও বেসরকারি খাতের মূলধন বিনিয়োগ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস বর্তমান ত্রৈমাসিকের শেষ নাগাদ সরকারের মূলধন বিনিয়োগ 50% এ পৌঁছাবে। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের শেষে এটি ছিল প্রায় 28%।
“দাম কম রাখতে নমনীয় বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম অনেক বেশি এবং খাদ্যশস্যের সরবরাহ প্রভাবিত হয়েছে। এটি সারা বিশ্বজুড়েই রয়েছে আর ভারত তার থেকে আলাদা নয়। আমরা জনগণকে এর থেকে আড়াল করার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং অন্যদের তুলনায় আমরা অনেক ভালো জায়গায় আছি, ” ওই আধিকারিক বলেছেন।
“অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি একটি উদ্বেগের বিষয় কিন্তু তেল বিপণন সংস্থাগুলির দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি সহনীয় স্তরের মধ্যে রয়েছে। ফলে এই নিয়ে এখনই কোনও নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। মনে হয় তেলের দাম ব্যারেলপিছু 90 ডলার পর্যন্ত হলেও আমাদের চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু 90 ডলার ছাড়িয়ে গেলে এটি মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য জিনিসের দামের উপর প্রভাব ফেলে,” তিনি যোগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম বর্তমানে 85 ডলারের আশেপাশে রয়েছে। কেন্দ্রী বাজেট পেশের সময় এই দাম ছিল 70-73 ডলারের আশেপাশে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App