ল্যাপটপ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাব বা টিভি, আমরা এগুলো কত যত্ন করেই না রাখি। কিন্তু এগুলি একবার বাতিল হয়ে গেলে, বা নতুন মডেল বাড়িতে এলে, এগুলো অনাদরে বাড়ির এক কোন পরে থাকে। বা আমরা পুরোনো এই সব সামগ্রী স্থানীয় ফেরিওলার কাছে বিক্রি করে দেই। আর এর থেকেই জন্ম হয় ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য বা ই-ওয়েস্ট।
ভারতীয় সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক অ্যাসোসিয়েশন (ICEA) এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও উপদেষ্টা সংস্থা Accenture-এর এক রিপোর্ট ও সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় 20 কোটি 60 লক্ষ ডিভাইস – স্মার্ট ফোন এবং ল্যাপটপ – দেশের বিভিন্ন পরিবারে পড়ে আছে যার কোনও ব্যবহার নেই।
2020-21 সাল পর্যন্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে. এর থেকে পরিষ্কার, দেশে বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম থেকে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা বর্জ্যের উপযুক্ত ‘অন্ত্যেষ্টি’ কতটা গুরুতর চ্যালেঞ্জ। কারণ এই সামগ্রীগুলির মধ্যে রয়েছে এমন সব রাসায়নিক যা জোটের তত্র ফেলে রাখলে বা পোড়ালে ভয়ঙ্কর দূষণের সৃষ্টি হতে পারে। এবং প্রায়ই তা ঘটেও থাকে।
“পাথওয়েস টু এ সার্কুলার ইকোনমি ইন দ্য ইন্ডিয়ান ইলেকট্রনিক্স সেক্টর” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 40 শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তাঁরা বাড়িতে মোবাইল এবং ল্যাপটপের মতো অন্তত চারটি সামগ্রী জমিয়ে রেখেছে। বছরের পর বছর ধরে এর কোনও ব্যবহার নেই।
সার্কুলার বা বৃত্তাকার অর্থনীতি বলতে বোঝানো হয়েছে “গ্রহণ করা (take), তৈরি (make) এবং নিষ্পত্তি (dispose)”-এর মত সরলরেখার মডেলের একটি বিকল্প। এর মূল ভাবনা হল ব্যবহার ফুরিয়ে গেলে সামগ্রীটিকে পুনরুদ্ধার (restoration) করা এবং নতুন জীবন দেওয়া (regenaration)। এছাড়া বর্জ্য বৈজ্ঞানিকভাবে নির্মূল করার ব্যবসায়িক মডেল তৈরী করা ও পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে কম বর্জ্যের জন্ম দেওয়া।
কিন্তু এই মডেলের জন্য আর্থিক উৎসাহের অভাব রয়েছে. পাশাপাশি, এগুলিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত তথ্য মজুত থাকার ফলে অনেকে এগুলি কাছ ছাড়া করতে চান না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সচেতনতার অভাব। সাম্মীক্ষা থেকে ইঙ্গিত, যে 40 শতাংশ গ্রাহক তাদের ডিভাইসগুলি পুনর্ব্যবহার করার জন্য দেননি কারণ তারা এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যবহৃত ডিভাইসের মধ্যে মোবাইল ফোনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলির পুনর্ব্যবহার করা হয় প্রধানত দুটি চ্যানেলের মাধ্যমে — স্থানীয় স্ক্র্যাপ ডিলাররা যারা শেষ ভোক্তাদের কাছ থেকে এগুলি সংগ্রহ করে এবং সংগঠিত বাল্ক অপারেটরদের মাধ্যমে।
90 শতাংশের মতো ফোন স্থানীয় স্ক্র্যাপ ডিলাররা বিভিন্ন পরিবারের থেকে সংগ্রহ করে।
2 শতাংশ ডিভাইস খুচরো যন্ত্রাংশ সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকটা অংশ ল্যান্ডফিলগুলিতে রাখা হয় যেখানে এগুলি সাংঘাতিক ভাবে দূষণ ছড়াতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে প্রায় 60 শতাংশ ডিভাইস যেগুলি মেরামত করা দরকার সেগুলি অসংগঠিত শিল্পের মেরামতকারী কাছে দেওয়া হয়। বিশেষ করে ওয়ারেন্টি-র বাইরে ফোনের ক্ষেত্রে এটা হয়।
Circular বা বৃত্তাকার ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসার সম্ভাবনা বড়। ICEA-Accenture বলছে যে সার্কুলার ইলেকট্রনিক্সের বাজারের আকার 2035 সালের মধ্যে 1300 ডলারে দাঁড়াতে পারে। স্বাভাবিকভাবে গতিতে ব্যবসা বাড়লেও এর মূল্য ঠেকতে পারে 2000 কোটি ডলারে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App