কিছু দিন হল প্রপার্টি মার্কেটে একটি নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেক ধনী ভারতীয় বিদেশে সম্পত্তি কিনছেন। এই ধরনের ক্রেতাদের তালিকা দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছেন বিজনেস টাইকুন থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র তারকারা। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি বলে থাকেন যে তিনি দুবাইতে একটি নয়, দু’টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।
তিনি অক্টোবরে পাম জুমেইরাতে প্রায় ১৬.৩ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কিনেছিলেন। এটি দুবাইয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক রিয়েল এস্টেট চুক্তি। এর আগে তিনি ৮ কোটি ডলার বা ৬৪০ কোটি টাকায় আরেকটি সম্পত্তি কিনেছিলেন।
গত বছর আম্বানি লন্ডনেও ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছিলেন। তিনি ছাড়াও শাহরুখ খান, অভিষেক বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অক্ষয় কুমার এবং সঞ্জয় দত্ত-সহ ধনী শ্রেণীর অনেকেই বিদেশে সম্পত্তি কিনেছেন। বিদেশী সম্পত্তির বাজারে ধনী শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ সম্পর্কে RBI ডেটা থেকে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
বিদেশে রিয়েল এস্টেট কেনার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো রেমিট্যান্স ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২১-২২ সালে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। RBI-এর রেমিট্যান্স স্কিমের অধীনে এই পরিমাণ ২০১৯-২০ সালে ৮.৬৪ কোটি ডলার থেকে ২০২১-২২ সালে ১১.২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এই স্কিমে, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা প্রতি বছর আড়াই লক্ষ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারে। এই সীমার বেশি পাঠাতে হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন প্রয়োজন।
এবার জেনে নেওয়া যাক কোথায় ধনী ব্যক্তিরা সম্পত্তি কিনেছেন
মুদাসার জাইদি, নাইট ফ্রাঙ্ক ইন্ডিয়ার উত্তর বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বলেন, ধনী ভারতীয়রা বেশিরভাগই লন্ডনে সম্পত্তি কিনতে পছন্দ করেন। এছাড়াও তাঁরা দুবাই, নিউ ইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো জায়গাতেও সম্পত্তি কিনতে পছন্দ করেন।
অনলাইন রিয়েল এস্টেট পোর্টাল Twindig.com জমি রেজিস্ট্রি ডেটা থেকে জানা যায়, লন্ডনে একটি বাড়ির গড় দাম ৫ লক্ষ ৫২,৭৫৫ পাউন্ড যা প্রায় ৫ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা যেখানে দিল্লি এবং মুম্বাইতে অতি বিলাসবহুল বাড়ির দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা থেকে শুরু হয়।
দুবাই অনেক কারণে প্রিয়। প্রথমত, দুবাই গোল্ডেন ভিসা অফার করে। অর্থাৎ যে কোনও ভারতীয় ২ মিলিয়ন দিরহাম অর্থাত্ ৪.৫ কোটি টাকা দামের একটি সম্পত্তি কিনতে পারেন এবং এক নিমেষে ১০ বছরের ভিসা পেতে পারেন। এই ভিসা পুরো পরিবারকে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বড় কারণ হল দুবাইতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স নেই। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে নৈকট্য এবং কম করের হারও দুবাইকে ভারতীয়দের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে।
কেন ধনী ভারতীয়রা বিদেশে সম্পত্তি কেনেন? জাইদি বলেন একটি দ্বিতীয় বাড়ি বা হলিডে হোম কেনার ইচ্ছা, বিদেশে পড়াশোনা করার সময় বাচ্চাদের থাকার উপযুক্ত জায়গা, অন্যান্য দেশে ব্যবসার প্রসার প্রভৃতি হল ধনী ভারতীয়দের বিদেশে সম্পত্তি কেনার প্রধান কারণ। এছাড়াও, অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা বাসস্থান পেতে বিদেশেও সম্পত্তি কেনা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য হ্রাস পেলেও এই ধরনের সম্পত্তি কেনা হয়। কারণ এমন পরিস্থিতিতে দামি সম্পত্তি কম দামে পাওয়া যায়। জাইদি বলেন যে বিদেশে রেন্টাল ইল্ড ভারতের চেয়ে ভাল। তাই ভাড়া থেকে ভালো উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। তারা এই ভাড়া ব্যবহার করে সম্পত্তি কেনার খরচ জোগায়। এই কারণে মানুষ ভারতের বাইরেও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ বাড়ায়।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App