শেষ জীবনে অর্থকষ্ট ঠেকাতে

অবসর পরিকল্পনার সময় মানুষ প্রায়শই একটি খুব সাধারণ একটি ভুল করেন। তাঁরা শুধু দৈনন্দিন খরচের জন্য টাকার ব্যবস্থা করার কথা ভাবেন।

আপনি একজন পেশাদার বা একটি ছোট ব্যবসার মালিক যাই হোক না কেন, আপনি নিশ্চয়ই চান কর্মজীবন শেষ করার সময় হাতে যথেষ্ট বড় তহবিল থাকে। যাতে পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবন আরামে কাটে। সর্বোপরি যাঁরা 55-60 বছর বয়স পর্যন্ত নিজেরাই পরিবারের সবদিক খেয়াল করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্যের উপর নির্ভর করা বেশ কষ্টকর হতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতেই অবসর পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু অবসর পরিকল্পনার জন্য কী কী বিষয় ভাবনাচিন্তা করা উচিত? অবসর গ্রহণের জন্য 555 নিয়মই বা কী?

প্রথমত, অবসর পরিকল্পনা একটি continuous process। এর মাধ্যমে আপনি আপনার উপার্জনের সময় অর্থাৎ যে বছরগুলিতে আপনি সক্রিয়ভাবে উপার্জন করবেন না তার জন্য ফান্ড প্রস্তুত করেন। সহজ কথায় আপনার যৌবনে বার্ধক্যের জন্য আপনি যে নিয়মিত বিনিয়োগ করেন তা হল অবসর পরিকল্পনা।
অবসর পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সময় কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন বয়সে অবসর নিতে চান, 55 না 60 বছর? অবসর গ্রহণের পর আপনি কী ধরনের জীবনধারা চান একটি সাধারণ নাকি বিলাসবহুল, অবসর গ্রহণের সময় আপনার কত টাকা লাগবে এবং কতদিনের জন্য ইত্যাদি।

আপনি যদি আপনার অবসর গ্রহণের সময় একটি বড় অঙ্কের তহবিল পেতে চান তাহলে ট্রিপল 5 নিয়মটি বুঝতে হবে। ট্রিপল 5 নিয়ম বলে আপনি যদি 25 বছর বয়সে একটি ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে 5,000 টাকা করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন, তাহলে 55 বছর বয়সে আপনার অবসরের তহবিল প্রায় 1 কোটি 76 লক্ষ টাকা হবে। যদি আপনার বিনিয়োগ বার্ষিক 5% বৃদ্ধি করেন, তাহলে 55 বছর বয়সে আপনার কাছে থাকবে 2 কোটি 63 লক্ষ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই আনুমানিক 12% রিটার্ন ধরা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে আপনি ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে 12% এর বেশি রিটার্ন অর্জন করতে পারেন।

অবসর গ্রহণের ট্রিপল 5 নিয়ম নিয়মিত বিনিয়োগের অভ্যাস তৈরি করে, যা অবসর পরিকল্পনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ দেরি করে বিনিয়োগ শুরু করেন, যেমন 30 বা 35 বছর বয়সে। কিছু মানুষ আবার তাড়াতাড়ি অবসর নিতে চান। কিছু মানুষের অবসর গ্রহণের পর বড় অঙ্কের ফান্ডের প্রয়োজন হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, অবসর পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। এই কাজটি করার দুটি পদ্ধতি আছে।

প্রথমত, আপনি একটি বড় মাসিক SIP শুরু করুন। যদি প্রাথমিকভাবে একটি বড় বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার কাছে স্টেপ-আপ SIP-র আরেকটি অপশন আছে। অর্থাৎ অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করুন এবং তারপর প্রতি বছর আপনার SIP পরিমাণ বাড়াতে থাকুন।

ধরা যাক এখন আপনার বয়স 30 বছর এবং আপনি 50 বছর বয়সে অবসর নিতে চান। অবসর গ্রহণের পরে আপনার জীবনের জন্য, আপনার প্রয়োজন হবে 5 কোটি টাকা। SIP ক্যালকুলেটর অনুযায়ী, 20 বছরে 5 কোটি টাকা টাকা জমাতে আপনার মাসিক SIP বা বিনিয়োগ হওয়া উচিত 50,000 টাকা। এখানে,আনুমানিক রিটার্ন হল বছরে 12%।

দ্বিতীয় উপায় হল আপনি 25,000 টাকা দিয়ে SIP দিয়ে শুরু করুন৷ স্টেপ-আপ SIP-র মাধ্যমে, প্রতি বছর আপনার SIP-র পরিমাণ 10% বৃদ্ধি করার অপশনটি বেছে নিন। এইভাবে প্রায় 20 বছরে আপনি প্রায় 5 কোটি টাকা জমাতে পারবেন।

অবসর পরিকল্পনার সময় মানুষ প্রায়শই একটি খুব সাধারণ একটি ভুল করেন। তাঁরা শুধু দৈনন্দিন খরচের জন্য টাকার ব্যবস্থা করার কথা ভাবেন। চিকিৎসার খরচের বিষয়ে তাঁরা খুব একটা নজর দেন না। মনে রাখবেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। যাতে আপনার সম্পূর্ণ অবসর তহবিল শুধুমাত্র চিকিৎসার কারণে খরচ না হয় তাই স্বাস্থ্য বিমা থাকা আবশ্যক। মনে রাখবেন অল্প বয়সে স্বাস্থ্যবিমা নিলে আপনি কম প্রিমিয়ামে বেশি কভারেজ পাবেন।

আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন, যদি গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করেন তবে এটি আপনার দোষ নয়। তবে আপনি যদি গরীব হয়ে মারা যান, এটি সম্পূর্ণ আপনার দোষ। তাই, এমন ভুল করবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিনিয়োগ শুরু করুন। আপনি যত তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণের জন্য বিনিয়োগ শুরু করবেন তত ভাল। সময় সম্পদ তৈরি এবং চক্রবৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Published: April 19, 2024, 13:07 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App