এডুকেশন লোন: অকারণে বোঝা বাড়াবেন না

লোন নেওয়ার আগে পড়ুয়াদের উচিত তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ব্যপারে মনোস্থির করেছেন সেখানকার প্লেসমেন্টের অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উচ্চশিক্ষার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিদেশে পড়তে যাওয়া, সব খরচই বেড়েছে। যে কারণে বহু মানুষের পক্ষে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে পা রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। উচ্চশিক্ষার খরচ যোগান দিতে শিক্ষা ঋণ একটি ভাল বিকল্প। শিক্ষাঋণ ব্যক্তির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে সবদিক বিবেচনা না করে ঋণ নেওয়া হলে ভবিষ্যতে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কোভিডের পর থেকে শিক্ষা ঋণের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, বার্ষিক 20.6% হারে শিক্ষা ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 2023-24 আর্থিক বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই অঙ্ক ছিল 1 লক্ষ 10 হাজার 715 কোটি টাকা। শিক্ষা ঋণের এই বৃদ্ধি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 2022-23 আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত 96,853 কোটি টাকার শিক্ষা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এখানে বৃদ্ধির হার 12.3%।

ঋণের বোঝা যাতে আপনার ঘাড়ে চেপে না বসে তাই কিছু জিনিস মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষা ঋণ নেওয়ার আগে পড়ুয়াদের সব ধরণের খরচের হিসাব দেখে নেওয়া উচিত। এমনভাবে ঋণ নেওয়া প্রয়োজন যাতে কলেজ বা কোর্স ফি’র পাশাপাশি অন্যান্য খরচও স্বাচ্ছন্দ্যে মিটিয়ে দেওয়া যায়। যেমন বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে যাওয়া-আসার খরচ, পড়াশোনার সরঞ্জামের খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, স্টাডি মেটেরিয়াল খরচ ইত্যাদি। যে কারণে ঋণ নেওয়ার আগে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করে হিসেব কষতে হবে। অনেক ব্যাঙ্ক স্টুডেন্ট লোন ক্যালকুলেটরের মতো অনলাইন টুল অফার করে। এর মাধ্যমে পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচের একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।

লোন নেওয়ার আগে পড়ুয়াদের উচিত তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ব্যপারে মনোস্থির করেছেন সেখানকার প্লেসমেন্টের অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া। এডুকেশন লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ নির্ধারণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেয়াদ বেছে নেওয়ার সময় অ্যাগ্রেসিভ মনোভাব ঠিক নয়। কারণ আপনি সঠিক সময়ে চাকরি না পেলে বা বেতন কাঙ্খিত না হলে সময়ে ঋণের কিস্তি মেটাতে পারবেন না। এমন হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ক্রেডিট স্কোরের উপরে। ভবিষ্যতে নতুন কোনও ঋণ নিতে চাইলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই ঠিক যত টাকা ঋণ নেওয়া প্রয়োজন ততটাই নিতে হবে। বেশি টাকা ঋণ নিলে বেশি EMI দিতে হবে এবং ঋণ বাবদ বেশি সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে EMI ক্যালকুলেটর ব্যবহার করলে সুবিধা হতে পারে।

এডুকেশন লোন নেওয়ার আগে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হল বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মধ্যে সুদের হার তুলনা করে নেওয়া। তা না হলে একটা ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।

যেমন, বেসরকারি ব্যাঙ্কের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বিভিন্ন ঋণে সুদের হার সাধারণত কম হয়। এডুকেশন লোন নিতে আগ্রহীদের জন্য সরকার বিদ্যালক্ষ্মী পোর্টাল চালু করেছে। চাইলে আপনি www.vidyalakshmi.co.in-এ লগইন করেও এই সমস্ত তথ্য দেখতে পারেন।

এই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করে আপনি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদের হার জানতে পারেন। ঋণের জন্য আবেদনও করা যাবে। এছাড়া যাঁরা ইতিমধ্যে শিক্ষা ঋণ নিয়েছেন তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা যাবে।

ভারতে এবং বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য আপনি যথাক্রমে 10 লক্ষ এবং 20 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। তবে ব্যাঙ্ক এবং NBFCগুলি IIM এবং IIT-এর মতো নামজাদা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য আরও বেশি ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যাঙ্ক অফ বরোদা’র ওয়েবসাইট অনুসারে, রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাঙ্কটি শিক্ষা ঋণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের 15 বছর পর্যন্ত সময় দিয়ে থাকে। আর নামী প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা কোনও জামানত ছাড়াই 40 লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ পেতে পারেন। এদেশে পড়াশোনা করার জন্য সর্বোচ্চ 1 কোটি 25 লক্ষ টাকা এবং বিদেশে পড়াশোনার জন্য সর্বোচ্চ 1 কোটি 50 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেতে পারে। ঋণের আবেদনে একজন গ্যারান্টারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়ে।

BankBazaar.com থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, SBI-তে শিক্ষা ঋণে সুদের হার 8.15 থেকে 11.15 শতাংশের মধ্যে। যেখানে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা পড়ুয়াদের 8.55 থেকে 12.50% সুদে শিক্ষা ঋণ দিয়ে থাকে। একইভাবে, HDFC ব্যাঙ্কে শিক্ষা ঋণের সুদের হার 9.50% থেকে শুরু হয়। আর দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক ICICI ব্যাঙ্কের সুদের হার 9.50% থেকে 14.75% পর্যন্ত। অনেক ব্যাঙ্ক আবার প্রসেসিং ফি-ও নেয়।

শর্তাবলী ভালোভাবে না পড়ে লোন ডকুমেন্টে সই করলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আপনার কেবল সুদের হার বিবেচনা করা উচিত নয় বরং সুদ কীভাবে গণনা করা হয় তাও বুঝতে হবে। এছাড়া প্রসেসিং ফি, প্রিপেমেন্ট অপশন, প্রিপেমেন্ট পেনাল্টি এবং কো-ল্যাটারালের মতো বিষয়গুলিতেও নজর দিতে হবে।

সাধারণত চাকরি পাওয়ার 6 মাস পর থেকে বা কোর্স শেষ হওয়ার 1 বছর পর থেকে শিক্ষাঋণের কিস্তি মেটাতে হয়। যদিও আপনি কলেজে ফি জমা দেওয়ার মুহূর্ত থেকে সুদ গণনা হতে শুরু করে। এটি আপনার ঋণের মূল অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়। অতএব, 6 মাস বা এক বছর অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা শুরু করলে ঋণের বোঝা কমবে। এছাড়া ঋণ পরিশোধে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। সময়মতো কিস্তি মেটাতে না পারলে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হতে পারে। আর দীর্ঘ দিন EMI দিতে ব্যর্থ হল ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে।

শিক্ষা ঋণ শুধু কেরিয়ার গড়তে সাহায্য করে না, এর পাশাপাশি আয়করের বোঝা কমাতেও সাহায্য করে। উচ্চ শিক্ষার জন্য নেওয়া ঋণে আয়কর আইনের ধারা 80E-এর অধীনে ছাড় পাওয়া যায়। ঋণ আপনার নিজের, বা আপনার সন্তানের, এমনকি আপনার স্ত্রীর হতে পারে। শিক্ষা ঋণের সুদের উপরে কড়ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায় এবং এর কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই করছাড়ের সুবিধা শুধুমাত্র EMI শুরু হওয়ার পরের আট বছর পর্যন্ত পাওয়া যায়। অতএব ঋণগ্রহীতার উচিত আট বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করা।

Published: February 21, 2024, 13:48 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App