বিয়ের পর: দায়িত্ব ও খরচের হিসেব

আপনার ব্যক্তিগত ও যৌথ আর্থিক লক্ষ্য স্থির করে ফেলুন। এই আলোচনার সময় পার্টনারের কাছে কোনও কিছু লুকোবেন না।

অন্বেষা ও অনীশ সদ্য বিয়ে করেছেন। হানিমুন ও আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণরক্ষা পর্বও শেষ। এখন দু’জনে মিলে সঞ্চয়, লগ্নি ও খরচের হিসেবনিকেশ করতে বসেছেন।

এতদিন তাঁরা দুজনে আলাদা আলাদা খরচের হিসেব করেছেন। কিন্তু বিয়ের পরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। তাহলে এখন তাঁদের কী করা উচিত? তাঁদের কি আলাদা আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রাখা উচিত নাকি একটা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা দরকার?

সাংসারিক খরচ তাঁরা নিজেদের মধ্যে কীভাবে ভাগাভাগি করবন? আসুন বুঝে নেওয়া যাক।

সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য নবদম্পতীরা জোরদার ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং করেন। কিন্তু বিয়ের পর্ব চুকে গেলে তাঁদের মধ্যে আর সেই উৎসাহ চোখে পড়ে না। অথচ এই সময়ে আর্থিক পরিকল্পনা খুব জরুরি। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে আর্থিক পরিকল্পনা করতে হবে?

সবার প্রথমে আপনার ব্যক্তিগত ও যৌথ আর্থিক লক্ষ্য স্থির করে ফেলুন। এই আলোচনার সময় পার্টনারের কাছে কোনও কিছু লুকোবেন না। আপনার কী ধরনের খরচ হয় এবং আর্থিক লক্ষ্যই বা কী, তাঁকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন।

প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা থাকে। আর সেই অনুযায়ী টাকা-পয়সার প্ল্যান করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি দম্পতির জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজন নিজেদের আলাদা আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এর ফলে দু’জনে মিলে যেমন তাঁরা এগিয়ে যেতে পারবেন তেমনই নিজেদের ইচ্ছেগুলোও পূরণ করতে পারবেন।

স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের কত আয় করেন, দু’জনের খরচ কত এবং তাঁরা কত টাকা লগ্নি করবেন তা ঠিক করে নেওয়া প্রয়োজন। এরপরে গাড়ি বা বাড়ি কেনা, ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার মতো উভয়ের ইচ্ছেগুলো এক জায়গায় ছকে ফেলুন। কতদিনের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ করতে চান তাও ঠিক করে ফেলতে হবে।

এরপরে একজন পেশাদারের সাহায্য নিয়ে দম্পতিরা তাঁদের প্রতিটি লক্ষ্য পূরণে কত টাকা প্রয়োজন হতে পারে তার একটি হিসেব করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী বাজেট করতে হবে।

এখন আলোচনা করা যাক দম্পতিদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি নিয়ে।

এখানে স্বামী এবং স্ত্রীর ভূমিকা ও দায়িত্ব কতটা তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। যেমন বিদ্যুতের বিলের মতো সংসারের খরচ কে বহন করবেন?

একজন ব্যক্তির বেতনই কি যথেষ্ট? নাকি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই বিনিয়োগ ও খরচ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবেন?

সমস্ত চলতি ঋণ, বিমা পলিসি এবং লগ্নি পর্যালোচনা করুন এবং আপনার বর্তমান বদলে যাওয়া লাইফস্টাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন।

বিয়ের সার্টিফিকেট তুলে নেওয়া ও মহিলা নিজের সারনেম পরিবর্তন করতে চাইলে আধার, প্যান কার্ড এবং অন্যান্য নথিতে সংশোধন এবং আপডেটের মতো জরুরি কাজ ফেলে রাখবেন।

একবার আর্থিক পরিকল্পনা করে ফেললে আর তা নিয়ে ভাবতে হবে না, ভুলেও মনে এমন চিন্তাভাবনা আনবেন না। বরং এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিবার শুরু করা, চাকরি পরিবর্তন, চাকরি জীবনে বিরতি বা শহর বা দেশ বদলের মতো ঘটনা জীবনে ঘটলে দম্পতিদের তাঁদের পরিকল্পনার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

এছাড়াও অবসর গ্রহণ, বাড়ি বা গাড়ি কেনা এবং আরও অনেক কিছুর জন্য নির্দিষ্ট জীবনের লক্ষ্যগুলির জন্য তহবিল আলাদা করে আপনার আর্থিক প্রস্তুতি শুরু করুন।

এই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলিতে ফোকাস করার সময়,.

জরুরি অবস্থার জন্যও হিসেব রাখতে ভুলবেন না। আপনার জীবনযাত্রার ব্যয়ের 3-6 মাসের সমপরিমাণ অর্থের একটি আপৎকালীন তহবিল তৈরি করুন।

আপনার সেভিং এবং বিনিয়োগ অ্যাকাউন্টে অটোমেটিক ট্রান্সফার অ্যাকটিভ করতে পারেন। এটি দ্রুত লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন পার্সোনাল ফাইন্যান্স উপদেষ্টা সংস্থা MoneyMantra-এর প্রতিষ্ঠাতা ভিরাল ভাট। পাশাপাশি এর মাধ্যমে আপনি অযথা খরচের হাতছানি এড়াতে পারবেন। এছাড়া আপনার আর্থিক পরিকল্পনার ট্র্যাক রাখতে নিয়মিত বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মনে রাখবেন, বিয়ের পর আর্থিক পরিকল্পনা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনার আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য দুজনে মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুন।

Published: January 4, 2024, 12:54 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App