এমার্জেন্সি ফান্ড: কালক্ষেপ নয়

কঠিন সময়ে আর্থিকভাবে ভরসা যোগায় এমার্জেন্সি ফান্ড। এর ফলে ঋণ নেওয়ার বা লগ্নির টাকা তুলে ফেলার প্রয়োজন হয় না।

প্রত্যেকেই খুশি মনে বিনিয়োগ করেন। আর কয়েক বছরের মধ্যে সেখান থেকে ভালো রিটার্ন আসা শুরু হলে তো কথাই নেই। কিন্তু হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হলে কী করবেন? গৌরবের মতো আপনি কি কখনও এই বিষয়টি ভেবে দেখেছেন? মনে রাখবেন, বিপদ বলেকয়ে আসে না। তাই সম্ভাব্য এমন যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবেলায় আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। সময়মতো সঠিক প্ল্যান করা না করলে অথৈ জলে পড়তে হতে পারে। গৌরব ঠিক যে ভুলটি করেছিলেন। ফলে এই মুহূর্তে তাঁর কাছে দু’টি রাস্তা খোলা আছে;- প্রয়োজন মেটানোর জন্য হয় তাঁকে বিনিয়োগ তুলে নিতে হবে; অথবা তাঁকে ঋণ নিতে হবে। গৌরবের এমার্জেন্সি ফান্ড থাকলে আজ আর এসবের প্রয়োজন হত না।

এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক প্রত্যেকের একটি এমার্জেন্সি ফান্ড থাকা কেন জরুরি। আর এই ধরনের ফান্ড তৈরির জন্য আপনি কোথায় বিনিয়োগ করতে পারেন, তারও হদিশ দেবো আমরা।

বিপদ দরজায় কড়া নাড়লে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এমার্জেন্সি ফান্ড। দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বেতন কাটছাঁট, চাকরি চলে যাওয়া, এমনকী পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর মতো পরিস্থিতিতে হঠাৎকরে এই টাকার প্রয়োজন হতে পারে।

এমার্জেন্সি ফান্ড থাকা কেন খুব জরুরি?

কঠিন সময়ে আর্থিকভাবে ভরসা যোগায় এমার্জেন্সি ফান্ড। এর ফলে ঋণ নেওয়ার বা লগ্নির টাকা তুলে ফেলার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া পরিকল্পনামাফিক বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে পারেন। আর নিরবচ্ছিন্নভাবে লগ্নি জারি রাখায় দীর্ঘ মেয়াদে ভালো টাকা রিটার্ন পেতে পারেন।

এমার্জেন্সি ফান্ডে কত টাকা থাকা প্রয়োজন?

কী ধরণের ধাক্কা আসবে তা কারোর পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব নয়। এমন হতে পারে যে, আপনাকে গাড়ি মেরামত করতে হবে। সেক্ষেত্রে খুব একটা বড় ধাক্কা নয়। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার মতো বড় ধাক্কার রেশ থেকে যায় বেশ কয়েক মাস। তখন নতুন চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত রোজকার সংসার খরচ চালানো বা EMI, সন্তানের পড়াশোনার খরচ ইত্যাদি নানা আর্থিক দায়দায়িত্ব পালন করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে কমপক্ষে তিন মাস থেকে ছ’মাসের প্রয়োজন পূরণ করা যাবে এমন অর্থ এমার্জেন্সি ফান্ডে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পার্সোনাল ফাইন্যান্স এক্সপার্টরা।

একটি এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরির জন্য আগে হিসেব করে দেখুন যে মাসে আপনার কত টাকা খরচ হয়। তার পরে হিসেব করুন যে প্রতি মাসের আয় থেকে কত টাকা সরিয়ে রাখতে পারবেন। এর কিছু টাকা আপনার এমার্জেন্সি ফান্ডের জন্য বরাদ্দ করুন। এছাড়াও এমার্জেন্সি ফান্ডের জন্য আপনার কাছে উদ্বৃত্ত থাকলে তাও বরাদ্দ করতে পারেন।

এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরির মূল লক্ষ্যই হল প্রয়োজনের সময় সঙ্গে সঙ্গে টাকা হাতে পাওয়া। যে কারণে এই ধরনের ফান্ডের একটা অংশ সবসময় হাইলি লিকুইড হওয়া উচিত। এই টাকা নগদে বা সেভিং অ্যাকাউন্টে রাখা যেতে পারে। অন্তত একমাসের সমস্ত খরচ চালানো যাবে এমন পরিমাণ অর্থ এভাবে রাখতে পারেন।

এমার্জেন্সি ফান্ডের বাকি টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে লগ্নি করা যেতে পারে। এখানে সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। FD ভাঙিয়ে একদিনের মধ্যে নগদ টাকা হাতে পাওয়া যায়৷ তবে, মেয়াদ শেষের আগে FD ভাঙালে জরিমানা গুণতে হতে পারে।

চাইলে আপনি সুইপ-ইন FD-ও বেছে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্টি অঙ্কের বেশি টাকা জমা থাকলে তা অটোমেটিক্যালি FD অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। একইভাবে, সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকা একটি নির্দিষ্ট থ্রেশহোল্ডের নীচে নেমে গেলে FD অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা যোগ করা হয়।

রেকারিং ডিপোজিটে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে টাকা রেখে আপনি একটি তৈরি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ পাবেন।

গৌরব যে ভুল করেছিলেন সেই ভুল আপনি করবেন না। কোনও এমার্জেন্সি ফান্ড না থাকলে আর কালক্ষেপ না করে এখনই তা করে ফেলুন। বিপদের সময় এটি বন্ধুর মতো আপনার পাশে দাঁড়াবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মিউচুয়াল ফান্ডের কিছু অংশ লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ডে রাখার পরামর্শ দেন। এটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং কিছু ক্ষেত্রে FD-র তুলনায় বেশি রিটার্ন দেয়। যা সাধারণত 8 থেকে 9% পর্যন্ত হয়ে থাকে। রিটার্নের অঙ্ক নির্ভর করে বাজারের অবস্থার উপরে। অবশ্য এই ধরনের ফান্ডগুলি ভাঙিয়ে টাকা হাতে পেতে 1 থেকে 3 দিন সময় লাগে। মেয়াদ শেষের আগে রিডমশনের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও জরিমানা দিতে হয় না।

Published: November 28, 2023, 13:58 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App