রোশনি বারবার তার মোবাইল ফোন চেক করতে থাকে। সে কোনও জব কনসালটেন্সি সংস্থা থেকে কল পায়নি। সে তার ইমেইলও দিনে অনেকবার চেক করে। আশা করে হয়তো কোনও কোম্পানি থেকে চাকরির অফার এসেছে কি না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হতাশার মধ্যে দিয়ে কেটে যাচ্ছে একের পর এক দিন। হতাশার পাশাপাশি তার দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। তার দুশ্চিন্তা হল শিক্ষা ঋণ নিয়ে। তার বাবা একটি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তাকে ভর্তি করতে 8 লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আশা ছিল একটি কোম্পানিতে চাকরি পেলে ঋণ ছোট করে মিটিয়ে দিতে পারবে। বেঙ্গালুরু থেকে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন লালন করেছিল রোশনি। কিন্তু রোশনীর মুখে তার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
রোশনি গত বছর বি-টেক পাশ করেছে। কিন্তু সে এখনও চাকরি পায়নি। যখন সে তার কলেজে ভর্তি হয়েছিল, তখন অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ নিতে আসত। তার অনেক সিনিয়রকে বিশাল প্যাকেজও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রোশনীর ফাইনাল ইয়ারে কোনও কোম্পানি কলেজে নিয়োগ করতে আসেনি।
আসলে রোশনীর গল্প দেশের লক্ষ লক্ষ যুবকের মতো। আইটি সংস্থাগুলি বিগত দুই দশক ধরে যুবক-যুবতীদের প্রচুর চাকরি দিয়ে আসছে। কিন্তু কোভিডের পর থেকে তারা নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। দেশের ও বিদেশের অনেক বড় আইটি কোম্পানি গত বছর থেকে নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। একই অবস্থা খুচরো ও ই-কমার্স শিল্পের।
আর্থিক মন্দার কারণে কোম্পানিগুলি ইতিমধ্যেই ফ্রেশারদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তার উপরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কর্মসংস্থানের সমস্যা বাড়িয়েছে। গত বছর ফ্রেশারদের নিয়োগ 30 শতাংশ কমে গেছিল। 2022 এর তুলনায় 2023 সালে নতুনদের জন্য কোম্পানিগুলি 20 শতাংশ কম নিয়োগ করেছে। এমনকি চাকরি পেলেও অবস্থা ভাল নয়। এখন স্থায়ী চাকরিও কমছে। সাম্প্রতিক EPFO তথ্য অনুসারে, ভারতে সংগঠিত সেক্টরের কর্মসংস্থান 30 মাসের সর্বনিম্ন স্টোরে রয়েছে।
রোশনি বাজেটে সরকারের কাছ থেকে একটি ভাল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি চায়। তরুণরা হতাশ কারণ ভারতের স্টার্টআপ বিপ্লবের গতি দ্রুত কমে গেছে। যখন চাকরি নেই, তখন কে ভর্তি করবে ব্যয়বহুল কলেজে?
দেশে যেভাবে কর্মসংস্থান কমছে তা দেখে শিক্ষা ঋণে ত্রাণ ও ছাড়ের জন্য সরকারের কাছে গ্যারান্টি চায় রোশনি।শিক্ষার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চান রোশনী। তাদের বাবা-মা অর্থের ব্যবস্থা করতে পারেন, শুধু এই কারণেই যেন মেধাবী যুবকদের স্বপ্ন ভেঙ্গে না যায়। রোশনি চাকরি জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে গ্যারান্টিও চান। সরকারের উচিত এমন ব্যবস্থা করা যাতে পরীক্ষা থেকে শুরু করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পর্যন্ত সবকিছু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়।
এবারের নির্বাচনী বাজেটে কি রোশনীর মতো শিক্ষার্থীদের আশা পূরণ হবে?
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App