বকেয়া পেমেন্ট যেন পেয়ে যাই...

প্রথমত, ক্ষুদ্রশিল্পের ক্ষেত্রে সস্তা ঋণ। ক্রমাগত সুদের হার বৃদ্ধি ও কাঁচামালের মুদ্রাস্ফীতির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। চড়া খরচ এবং ব্যয়বহুল ঋণের পরে মুনাফা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। তাই শুভজিৎ সুদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় কিংবা ঋণের শর্তে বদল চায়।

বর্ধমানের ব্যবসায়ী শুভজিৎ ঋণ পুর্নগঠনের আবেদন নিয়ে ব্যাঙ্কের বাইরে বসে আছেন। তাঁর আবেদন ঋণের শর্ত বদলের জন্য। কারণ তিনি বছর দেড়েক আগে ব্যবসা নতুনভাবে সাজানোর জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা সময়ে তিনি মেটাতে পারছেন না। কারণ তাঁর তৈরি পণ্য ভালভাবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। ফলে ঋণশোধের সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না।

ইতিমধ্যেই তিনি সুদের একটি কিস্তি সময়ে দিতে পারেননি। ঋণখেলাপের ভয়ে তিনি ব্যাঙ্কে এসেছেন। ডানকুনিতে শুভজিৎ-এর একটি ছোট কারখানা আছে। যেখানে টি-শার্ট তৈরি হয়। মূলত দেশের বড় সংস্থাগুলিতে শুভজিৎ-এর সংস্থা টি-শার্ট সরবরাহ করে থাকে। পুজো থেকেই আর সেভাবে নতুন অর্ডার আসছে না। পাশাপাশি, আগের সব পেমেন্টও এখনও হাতে আসেনি।

শুভজিৎ-এর সংস্থার মতো দেশের ছোট শিল্প সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে লাভের হার খুবই সামান্য হয়ে থাকে। সামান্য উত্থান-পতন সংস্থার ব্যবসাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। এই সংস্থাগুলির না আছে বড় সংস্থার মতো দাম বাড়ানোর স্বাধীনতা নেই না বাজার থেকে টাকা তোলার ক্ষমতা। এই ধরনের ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি সরকার, ব্যাঙ্ক ও বাজারের করুণায় টিকে রয়েছে।

শুভজিৎ-এর মতো ব্যবসায়ীরা এ বছর সরকারের কাছে তিনটি আশ্বাস চান।

প্রথমত, ক্ষুদ্রশিল্পের ক্ষেত্রে সস্তা ঋণ। ক্রমাগত সুদের হার বৃদ্ধি ও কাঁচামালের মুদ্রাস্ফীতির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। চড়া খরচ এবং ব্যয়বহুল ঋণের পরে মুনাফা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। তাই শুভজিৎ সুদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় কিংবা ঋণের শর্তে বদল চায়।

দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা, যারা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত, বিশ্বব্যাপী মন্দার জন্য তাদের উপর প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি-সংক্রান্ত শিল্পকে বাঁচাতে সরকার যদি কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করে তাহলে শিল্পের জন্যই মঙ্গল। যদি রপ্তানির জন্য ব্যাঙ্ক সস্তায় ঋণ দেয় কিংবা কোনও বন্ধক ছাড়াই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শুভজিৎ-এর মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

তৃতীয় গ্যারান্টি হল ব্যবসা করার ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস কাটানো। যে কোনও ব্যবসা করতে আপনাকে আগুন, শ্রম, দূষণ, EPFO ইত্যাদি 30 টিরও বেশি বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। এই সমগ্র বিষয়টি যদি এক ছাতার তলায় আনা যায় তাহলে ব্যবসায়ীদের সময় ও পয়সা উভয়ই বাঁচবে।

এখন প্রশ্ন হল শুভজিৎ-এর এই দাবি কেন পূরণ করতে হবে? কারণ 5 লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি তৈরি করতে এই ধরনের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্প সংস্থার উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রপ্তানির প্রায় 45%-ই হয় MSME ক্ষেত্র থেকে। দেশের GDP-তে এই খাতের অংশীদারিত্ব প্রায় 29%।

অর্থাৎ সরকারকে এই ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিতেই হবে। আর তাদের জয় মানেই আখেরে ভারতের জয়।

Published: January 26, 2024, 03:30 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App