বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য অনেকগুলি নতুন পথ খুলে গেলেও মিউচুয়াল ফান্ডের বিকল্প এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। কম লগ্নি করে, ঝুঁকি কম নিয়ে বেশি লাভ করতে মিউচুয়াল ফান্ডের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু তা সত্ত্বেও মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কেউই বেশি কিছু জানেন না।
মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইকুইটি ও ডেট মিউচুয়াল ফান্ডকে মোট ১১ ও ১৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের পরিধি কতটা বিস্তৃত। এদের একেকটি মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুঁকি ও লাভের অঙ্কও ভিন্ন। সেই কারণেই যে কোনওরকম মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে একাধিক বিষয়ে নজর দিতে হবে, মানি ৯ আপনাকে সেরকম ৯টি গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখাচ্ছে, যা মাথায় রেখে বিনিয়োগ করলে আপনার মোটের উপর খুব একটা ক্ষতি হবে না।
বিনিয়োগকারীদের প্রথমেই বুঝে নিতে হবে এটা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নয়। ফলে শেয়ার বাজারের মত লাভ-ক্ষতির হিসেব কষলে তা সঠিক হবে না। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে, ফলে লাভ-ক্ষতির চরিত্রও শেয়ার বাজারের তুলনায় ভিন্ন হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ে (৬ মাস-১ বছর) বেশি লাভের আশা করা কখনই উচিত নয়। পাশাপাশি, ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা অন্য কোনও প্রকল্পের মত এই ক্ষেত্র স্থায়ী যে একটা রিটার্ন দিয়ে যাবে, সেটাও নয়। মিউচুয়াল ফান্ড চরিত্রগতভাবে ভিন্ন হয়।
সবসময় এরকম ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, তাতে লাভ কিংবা ক্ষতির পরিমাণ ও প্রবণতা একই হয়ে যায়। সেই কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় বিনিযোগের ক্ষেত্র ভিন্ন করতে হয়। তবে বেশি বৈচিত্র্য আবার বিনিয়োগের মূলমন্ত্রকে নষ্ট করে দেয়।
মিউচুয়াল ফান্ডে আপনি নিজের ঝুঁকি বুঝে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বেশি পরিমাণ ঝুঁকি নিতে চাইলে ইকুইটি ফান্ড, মাঝারি ঝুঁকি নিতে চাইলে ব্যালেন্সড ফান্ড ও খুব কম ঝুঁকির জন্য ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে ফান্ডভেদে লাভের অঙ্কও ভিন্ন হয়ে থাকে।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল মাসিক কিস্তি বা এসআইপি-র মাধ্যমে বিনিয়োগ। কম অঙ্কের টাকা দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ করলে যে লাভ পাওয়া যায়, তা এর মাধ্যমেই পাওয়া যায়। সেই কারণে শেয়ার বাজারের পতন কিংবা উত্থানে বিব্রত কিংবা আনন্দিত হয়ে বিনিয়োগ বন্ধ করা একেবারেই উচিত নয়।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলেই হবে না, নিজের সম্পদকে সঠিকভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। সেই কারণেই নিজের বিনিয়োগকে ডেট, ব্যালেন্স ও ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে শেয়ার বাজারের বিরাট পতনেও আপনার গায়ে আঁচ না লাগে.
প্রত্যেক মানুষের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ভিন্ন হয়। নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা বুঝে তারপরেই ঝুঁকির সীমা নির্ধারণ করুন, সেই মত বিনিয়োগ করুন। কারণ, নিজের নেওয়া ঝুঁকির সীমা সবচেয়ে ভাল আপনি নিজেই সবচেয়ে ভাল জানবেন।
সবসময় আপনার ভুলের জন্যই যে আপনার বিনিয়োগ ডুবে যেতে পারে, তা নয়। ফান্ড হাউজগুলিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভুল করে, তার ফল বিনিয়োগকারীদের ভুগতে হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের লাভের অঙ্ক স্থির নয়, বরং তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তাই ফান্ড হাউজগুলির পদক্ষেপের উপরও আপনার লাভের অঙ্ক নির্ভর করছে।
আপনি নিজে কী লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ করছেন, তা নিজের কাছে স্পষ্ট করুন। তার জন্য কিছুটা ঝুঁকির পথও নিন। তবে সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনার। লক্ষ্য স্থির থাকলে তাতে পৌঁছে যাওয়াও আপনার পক্ষে সহজ হবে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App