ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বাজেটে। সব ব্যাঙ্কের এডুকেশন লোনের সুদের হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যখন এক ডলারের মূল্য ছিল ৭৫ টাকা তখন ২০০০ ডলার মূল্যের একটি কোর্সের ফি ছিল দেড় লাখ টাকা। যেহেতু এখন এক ডলার ৮০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাই একই কোর্সের মোট ফি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
তাই যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন তাঁরা দ্বিগুণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শুধু ভারত নয় গোটা বিশ্বই এখন মুদ্রাস্ফীতির কবলে। ENRIZON-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও গৌতম গ্যাডগিল বলেন, আমেরিকায় প্রতিটি কোর্সের খরচ ৭-৮ শতাংশ বেড়েছে৷ সুতরাং যারা ইতিমধ্যেই বিদেশে পড়ছেন তাঁদের আরও খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমেরিকার তুলনায় ইউরোপের যে কোনও দেশে এমনকী অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া এখন সস্তা। আমেরিকায় যাওয়া পড়ুয়াদের সংখ্যা অবশ্য এখনই কমবে না। কিন্তু শিক্ষাঋণে সুদের হার অপরিবর্তীত থাকলে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অন্য দেশেও যেতে পারবেন।
বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে ১৩ লাখ ২৪ হাজার পড়ুয়া বিদেশে পড়াশোনা করছেন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন। আমেরিকায় প্রায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী আছেন।
ইউরোপীয় দেশগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, ইংল্যান্ডে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫ হাজার ৪৬৫, জার্মানিতে সংখ্যাটা ৩৬ হাজার ৮৬৪ জন এবং ফ্রান্সে মাত্র ১০,০০০।
কোর্সের ফি বৃদ্ধির অর্থ হল বেশি পরিমাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। আগে যেখানে ৫০ লাখ টাকা লোন নিতে হত এখন একই কোর্সের জন্য ৫৫ লাখ টাকা লোন নিতে হবে। এর প্রভাবে EMI এবং সুদের বোঝা বাড়বে। আপনি যদি ১১.৫% সুদে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নেন ১০ বছরের জন্য তাহলে EMI হবে ৭০ হাজার ২৯৮ টাকা। ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৭ টাকা সুদ দিতে হবে। অর্থাত আপনাকে ব্যাঙ্কে ৮৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৭ টাকা ফেরত দিতে হবে।
অন্যদিকে, যদি আপনাকে একই সুদের হারে ৫৫ লাখ টাকা লোন নিতে হয় তাহলে ৭৭ হাজার ২৩৭ টাকার ইএমআই দিতে হবে। এর উপর, ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ টাকার সুদের সঙ্গে ব্যাঙ্কে মোট ৯২ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ টাকা ফেরত দিতে হবে।
SBI ৭.৫ লক্ষ টাকার এডুকেশন লোনে ৯.৫৫ % সুদ নিচ্ছে। HDFC ব্যাঙ্ক ৯.৫৫% থেকে ১৩.৩৫% সুদ নিচ্ছে। PNB ৯.৬৫% চার্জ করছে। ICICI ব্যাঙ্ক ১০.৫০% এর বেশি সুদ নিচ্ছে।
প্ল্যান এহেডের প্রতিষ্ঠাতা বিশাল ধাওয়ান বলেন, ফি ছাড়াও সেখানে থাকার খরচও বহন করতে হবে। এডুকেশন লোনের EMI প্রায় ৭০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বেশি হবে। চলতি সেমিস্টারে সুদের বোঝা ৩.০০ লক্ষ থেকে ৩.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশালের মতে, এডুকেশন লোনের উপর নির্ভর না করে সময় থাকতে থাকতে বিনিয়োগ করলে এমন পরিস্থিতিতে সেই অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডগুলি টাকা-ডলারের ওঠানামা আরও ভালভাবে ম্যানেজ করতে পারে। টাকার দাম পড়ে যাওয়ার কারণে আপনাকে আরও সুদ দিতে হবে। তবে এই পরিমাণের উপর আয়করের ধারা ৮০(ই)-এর অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি সম্পূর্ণ সুদের অর্থ প্রদানের জন্য ছাড় দাবি করতে পারেন এবং আপনার বার্ষিক আয় থেকে এটি বাদ দিতে পারেন। এডুকেশন লোনে শিক্ষার্থীও ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রেস পিরিয়ড পায়। শিক্ষা ঋণ কোর্স শেষে ফেরত দেওয়া যাবে। যদি ঋণটি ৩ বছরের কোর্সের জন্য নেওয়া হয় তবে শিক্ষার্থী এবং তাঁর পরিবারকে তিন বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কোর্স শেষ হওয়ার পর চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের জন্য ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় পাবেন।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App