অয়ন তাঁর বর্তমান ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা কভার যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির খরচ বাড়ছে দিন দিন। প্রশ্ন, ৫ লক্ষ টাকার কভার কি আগামী দিনের জন্য যথেষ্ট হবে? একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা ঘটলে ৫ লক্ষ টাকার কভার কতটা সাহায্য করবে? স্বাস্থ্যবিমা সম্পর্কিত এই প্রশ্নগুলি যদি আপনার মনেও থাকে তাহলে এই সময় আপনার বিমা পর্যালোচনা করা উচিত। স্বাস্থ্যবিমার সবচেয়ে বড় বিষয় হল চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া।
মতিলাল ওসওয়ালের গবেষণা প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ২০২১ সালে চিকিৎসা খরচ ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। The All India Debt and Investment Survey–র পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ভারতীয় পরিবারে ঋণের ১২ শতাংশ চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা হয়। বিমার অভাবে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬২.৭ শতাংশ নিজস্ব পকেট থেকে পরিশোধ করা হয়। যদিও বিশ্বজুড়ে গড় চিত্র মাত্র ১৮.১ শতাংশ। তাই মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং খরচ এড়াতে স্বাস্থ্যবিমার পর্যাপ্ত কভার প্রয়োজন।
আপনি যদি ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যবিমা করে থাকেন তবে কভারেজ বাড়ানোর জন্য আপনার কাছে ৩টি অপশন রয়েছে। প্রথম হল পলিসি রিনিউ করার সময় কভারেজ বাড়ানো। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম পেমেন্ট সহ আপনি সংস্থা থেকে বিমাকৃত অর্থ পেতে পারেন। অন্য উপায় হল বেস পলিসির উপরে টপ আপ করা এবং অতিরিক্ত লেয়ার পাওয়া। তৃতীয় উপায় হল আপনার বর্তমান পলিসিতে সুপার টপ আপ প্ল্যান যোগ করা।
টপ আপ হল এক ধরনের এক্সটেনশন যা আপনি আপনার বর্তমান বা নতুন বেস স্বাস্থ্যবিমা প্ল্যানে কিনতে পারবেন। যখন আপনার বেস প্ল্যানের পরিমাণ শেষ হয়ে যাবে তখন টপ আপের কভারেজ শুরু হয়। আপনি যে সংস্থা থেকে বেস প্ল্যান পেয়েছেন সেই সংস্থা বা ভিন্ন সংস্থা থেকে টপ আপ পেতে পারেন।
টপ আপ পলিসি অল্প পরিমাণে তুলনামূলকভাবে বেশি কভারেজ প্রদান করে। তাই বেশিরভাগ সংস্থা টপ আপ বা সুপার টপ আপ প্ল্যান বিক্রি করে। যখন চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায় তখন এই পলিসি সেই অতিরিক্ত খরচ কভার করে।
৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা কভার থাকলে তারপর সুপার টপ আপের মাধ্যমে আপনি ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বা আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটা অতিরিক্ত কভার পেতে পারেন। তাই আপনি যদি ১ বছরে চিকিৎসা খরচে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেন তাহলে আপনি টপ আপ প্ল্যানের সুবিধা পাবেন। এই বেস কভারের পরিমাণ কর ছাড় যোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং এটি আপনার বিমার বেস কভার থেকে প্রদান করা হবে। এর উপরে খরচ টপ আপ থেকে দেওয়া হবে।
বাজাজ ক্যাপিটাল ইন্স্যুরেন্সের সিইও ভেঙ্কটেশ নাইডু বলেন, যাঁদের শুধুমাত্র গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স কভার আছে এবং যাঁরা অফিস থেকে সেই সুবিধা পেয়েছেন তাঁরাও অতিরিক্ত কভারেজ পেতে টপ আপ প্ল্যান ব্যবহার করতে পারেন। এর পাশাপাশি যদি কেউ তাঁদের কভারেজ বাড়াতে চান তাঁরা টপ আপ বা সুপার টপ আপের মাধ্যমে কভারেজ বাড়াতে পারেন। বিমা বাজারে আপনি ২,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকায় ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষের প্ল্যান পেতে পারেন৷
আপনাকে টপ আপ এবং সুপার টপ আপ প্ল্যানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বুঝতে হবে। বেস পলিসি ব্যবহার করার পর টপ আপ কভারের অধীনে অর্থে হাত দেওয়া হয়। কিন্তু আপনি বছরে মাত্র একবার টপ আপ ক্লেম পাবেন এবং সেটাও যখন আপনি বেস অর্থ ব্যবহার করে ফেলবেন শুধু তখনই। আপনি সুপার টপ আপ প্ল্যানের মাধ্যমে একাধিক ক্লেম পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ অয়নের যদি ৫ লক্ষ টাকার বেস কভার থাকে তাহলে তিনি ১০ লক্ষ টাকার টপ আপ প্ল্যান পেতে পারেন। হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমে বেস কভার ব্যবহার করা হবে। যদি বিল মাত্র ৪ লক্ষ টাকা হয় তবে শুধুমাত্র বেস কভারের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হবে। এখন ধরা যাক একই বছরে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন আরও ৩ লক্ষ টাকা। তাহলে এটা হবে না যে বেস কভার থেকে ১ লক্ষ তারপর টপ আপ প্ল্যান থেকে ২ লক্ষ কেটে নেওয়া হবে। তিনি তখনই টপ আপ পাবেন যখন তিনি দেখাতে পারবেন যে ৫ লক্ষ টাকার বেস কভার ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। যদিও সুপার টপ আপ একাধিক হাসপাতালে ভর্তির সুবিধা দেয়। সেক্ষেত্রে একই বিলের প্রয়োজন নেই। অয়ন সহজেই বেস কভারে অবশিষ্ট ১ লক্ষ টাকা ব্যবহার করতে পারেন। তারপর সুপার টপ আপের মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের জন্য বাকি ২ লক্ষ টাকা ব্যবহার করতে পারেন।
এখন প্রশ্ন, সুপার টপ আপ পলিসি পাওয়ার আগে কি হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসি কেনা দরকার? তাহলে উত্তর হল না। এমনকি আপনার স্বাস্থ্যবিমা না থাকলেও আপনি সুপার টপ আপ পলিসি কিনতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে বেস কভার পর্যন্ত খরচ আপনার নিজের পকেট থেকে পরিশোধ করতে হবে। তারপরই সুপার টপ আপ কভার শুরু হবে। সুপার টপ আপ পলিসিতে আপনি নিজের, আপনার স্ত্রী এমনকি আপনার সন্তানেরও কভারেজ পেতে পারেন। আপনি ফ্যামিলি ফ্লোটারের ভিত্তিতেও এই পলিসি নিতে পারেন।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App