গৃহিণীদের জন্য এখন থেকে আলাদা টার্ম ইন্সিওরেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে। মিস্টার বসু এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। কারণ তিনি এখন তাঁর স্ত্রী সহেলীর জন্য পৃথক বিমা পলিসি কিনতে পারবেন। ম্যাক্স লাইফ ইন্সিওরেন্স এবং পলিসিবাজার গৃহিণীদের জন্য নির্দিষ্টভাব ম্যাক্স লাইফ স্মার্ট সিকিউর প্লাস চালু করেছে। কিন্তু তাদের এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। পৃথক জীবন বিমা পলিসিগুলি শুধুমাত্র গৃহিণীদের জন্য চালু করা হলেও তাঁরা তাঁদের স্বামীর আয়ের প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের পলিসি কিনতে পারবেন না।
গৃহিণীদের জন্য আলাদা কোনও বিমা পলিসি নেই। বেশিরভাগ সংস্থা স্বামীর বিমা পলিসির অধীনে গৃহিণীদের বিমা দিয়ে থাকে। স্বামীর আয়ের প্রমাণের ভিত্তিতে একটি নিয়মিত টার্ম প্ল্যান কেনা যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত বিমা কভারের ৫০% পর্যন্ত পেয়ে থাকেন গৃহিণীরা। যদি স্বামীর আয় খুব বেশি না হয় তবে তিনি কম কভার পান। সেই পরিমাণের অর্ধেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্ত্রীর জন্য অবশিষ্ট থাকে যা প্রায়শই যথেষ্ট নয়।
পলিসিবাজার ডট কমের টার্ম লাইফ ইন্সিওরেন্সের প্রধান প্রভীন চৌধুরী বলেন, কোভিডের সময় অনেক পরিবার তাদের বাড়ির গৃহিণীদের হারিয়েছে। এই বিমা প্রবর্তনের পিছনে ধারণা হল যে গৃহিণীদের অবদান আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার পাশাপাশি তা স্বীকৃতি দেওয়া। গৃহিণীর প্রয়াণ একটি পরিবারের ব্যায় বাড়িয়ে দিতে পারে। সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য স্বামীকে কেরিয়ার পরিবর্তন করতে হতে পারে, কারণ স্ত্রীর দায়িত্ব তখন হঠাৎ স্বামীর কাঁধে এসে পড়তে পারে।
ম্যাক্স লাইফ ইনসিওরেন্সের এবং পলিসি বাজারের হাউসওয়াইফ ইনসিওরেন্স ৪৯.৯৯ লক্ষ টাকার কভার অফার করছে। স্বামীর কোনও পলিসি না থাকলেও এটি গৃহিণীদের জন্য পাওয়া যাবে। বয়স এবং বিমার শর্তাবলীর উপর নির্ভর করে প্রিমিয়াম ১০-১২ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়।
তবে এক্ষেত্রে স্বামীর আয়ের প্রমাণও দেখাতে হবে। বার্ষিক ভিত্তিতে তার আয় হতে হবে ৫ লক্ষ টাকার উপরে। পাশাপাশি স্ত্রীকে অবশ্যই স্নাতক হতে হবে।
একইভাবে টাটা কোম্পানিরও একটি হাউসওয়াইফ ইনসিওরেন্স রয়েছে। স্বামীর বার্ষিক আয় বছরে মাত্র ৩ লক্ষ টাকার উপরে হলেও ভারতের প্রথম বিমা কোম্পানি ক্লাস টেন পাস গৃহিণীদের জন্য বিমা পলিসি অফার করে। যদি তিনি সেল্ফ এমপ্লয়েড হন তাহলে আয় ৪ লক্ষ টাকার উপরে হতে হবে। এছাড়াও, স্বামীর ৪০ লক্ষ টাকার কভার থাকতে হবে। HDFC লাইফ ক্লাস টেন পাস গৃহিণীদের বিমা অফার করে থাকে।
গৃহিণীদের জন্য বিমা কভারটি দুর্দান্ত শোনালেও এই পলিসির তিনটি শর্ত এটির সুবিধা সংকুচিত করেছে। প্রথম শর্ত হল, গৃহবধূর শিক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, পরিবারের বার্ষিক আয়ের যে মাপকাঠি রাখা হয়েছে তা পূরণ করতে হবে। সেইসঙ্গে স্বামীর যদি একই সংস্থার বিমা থাকে তবেই এই বিমা কভার পাওয়া যাবে। ফলে স্বল্প শিক্ষিত গৃহিণী এবং নিম্ন আয়ের পরিবার এই বিমার আওতায় আসতে পারবেন না। তৃতীয় শর্ত, স্বামীর আয়ের প্রমাণ ছাড়া স্ত্রীর বিমা পলিসি করা যাবে না।
যদি বর্তমান বিমা পলিসিগুলির এই ধরনের শর্ত এই পলিসিতেও প্রযোজ্য হয় তাহলে এই পলিসিটি কীভাবে আলাদা?
গ্রোমোর ফিনটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিশা সাংভি বলেন, মহিলা যদি কোনও আয় না করেন তবে তাঁর জন্য বিমা কেনার খুব বেশি যুক্তি নেই৷ যদি তিনি সিঙ্গেল মাদার হন এবং সন্তানদের দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু কাজ না করেন তাহলে তাঁর একটি বিমা পলিসি থাকা উচিত। কিন্তু গৃহিণীদের বিমার ক্ষেত্রে যদি স্বামীর আয়ের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক হয় তাহলে সিঙ্গেল মাদাররাও এই ধরনের বিমা পলিসির সুবিধা নিতে পারবেন না।
বিমা নিয়ন্ত্রক IRDAI-এর বার্ষিক রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৯-২০ সালে ইনসিওরেন্স পেনিট্রেশন ৩.৭৬ শতাংশ ছিল। ২০২০-২১ সালে তা ৪.২০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইনসিওরেন্স পেনিট্রেশন আমাদের বলে যে জিডিপি এবং বিমা প্রিমিয়ামের অনুপাত কত হতে পারে।
মানুষ বিমা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। এই কারণে সংস্থাগুলোর প্রিমিয়াম আয়ও বাড়ছে। সংস্থাগুলি প্রিমিয়াম খাতে ২০১৯-২০ সালে ৫.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা তুলেছে। তার পরের বছর এই খাতে সংগ্রহ হয়েছে ৬.২৯ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও দেশের এক বিপুল অংশের জনগণের কোনও বিমা নেই।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App