ভারতের টেলিকম পরিষেবা ক্ষেত্রে দুটি কোম্পানি ভারতী এয়ারটেল এবং রিলায়েন্স জিও-র আধিপত্য রয়েছে। এই শিল্পের তৃতীয় সংস্থা ভোডাফোন আইডিয়া নিজেদের জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে। এবার শেষ পর্যন্ত ভোডাফোন আইডিয়া মূলধন বিনিয়োগ পরিকল্পনা শুরু করেছে। কিন্তু এই মূলধন কি কোম্পানির জন্য যথেষ্ট? এটি কি কোম্পানিকে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে? যাঁদের কাছে Vi-এর শেয়ার রয়েছে এবং যাঁরা FPO-তে নতুন করে শেয়ার কিনতে চান, তাঁদের জন্য যথাযথ কৌশল কী হবে? আসুন বোঝার চেষ্টা করি।
কোম্পানি ঋণ মুক্তির পথ খুঁজছে
ভোডাফোন আইডিয়ার মাথায় বিপুল ঋণের বোঝা. এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সংস্থাটি 45,000 কোটি টাকা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিমাণ অর্থ ইক্যুইটি এবং ঋণ, দুই পথেই সংগ্রহ হবে। 1 জুনের মধ্যে ইক্যুইটির মাধ্যমে 20,000 কোটি টাকা তোলা হবে৷ পরে ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে 25,000 কোটি টাকা তোলা হবে। এর জন্য কোম্পানির বোর্ড ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে। আদিত্য বিড়লা গ্রুপ ইক্যুইটি তোলার কাজ শুরু করেছে যা প্রেফারেনশিয়াল শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে 2,075 কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের কোম্পানি ওরিয়ানা ইনভেস্টমেন্টসকে 14.87 টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যু করা হবে। কিন্তু বোর্ড এই মূল্য থেকে 26-33 শতাংশ ছাড়ে অর্থাৎ 10-11 টাকার প্রাইস ব্যান্ডে 18,000 কোটি টাকার FPO অনুমোদন করেছে।
এই ইস্যুটি 18 থেকে 22 এপ্রিল পর্যন্ত খোলা হবে. এটি হবে দেশের বৃহত্তম FPO। কিন্তু প্রোমোটার এবং FPO থেকে পাওয়া অর্থ কি কোম্পানির সঙ্কটমুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে আসুন জেনে নিই কোম্পানীর সমস্যাগুলি কী এবং এর কারণই বা কি।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে
Vodafone Idea অর্থাৎ Vi 2018 সালে গঠিত হয়েছিল. ওই বছর আদিত্য বিড়লা গ্রুপের কোম্পানি আইডিয়া সেলুলার এবং ইংল্যান্ডের ভোডাফোন-এর ভারতীয় ইউনিট মার্জার হয়েছিল। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় সরকার এই কোম্পানির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে। কারণ মার্জারের পরে কোম্পানির জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে. ইংল্যান্ডের মূল কোম্পানি ভোডাফোন PLC এই ভারতীয় ইউনিটে তার সমস্ত বিনিয়োগ বাতিল করেছে এবং জানিয়েছে তারা এই সংস্থায় আর লগ্নি করবে না। সংস্থাটি এতটাই সংকটে রয়েছে যে তারা এখনও 5G পরিষেবা চালু করতে সক্ষম হয়নি। পাশাপাশি, মার্চের শেষে Jio 10 কোটি এবং Airtel 7.5 কোটি 5G গ্রাহক সংখ্যা অতিক্রম করেছে।
অবস্থা কেন বেহাল হয়েছিল
2007 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত গ্রাহকের সংখ্যা যত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এই শিল্পে প্রতিযোগিতাও সেই গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। 2016 সালে Jio লঞ্চের সাথে এক অর্থে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল কারণ মূল্য যুদ্ধ কোম্পানিগুলির ARPU অর্থাৎ ব্যবহারকারী প্রতি গড় আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দিয়েছিল।
পরিস্থিতি এমনই যে ডিসেম্বরের শেষ অবধি কোম্পানিটির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে 2.14 লক্ষ কোটি টাকা। অন্যদিকে, Vi থেকে গ্রাহক ক্রমাগত এয়ারটেল এবং জিওর কাছে চলে যাচ্ছে, যে কারণে এটি বেশ কয়েক ত্রৈমাসিক ধরে লোকসান করে চলেছে।
Vi অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে পারবে কি
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন প্রোমোটার আর FPO-র টাকা দিয়ে কোম্পানির কী সমস্যার সমাধান হবে? এই পরিমাণ প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যথেষ্ট হবে? টেলিকম সেক্টরে প্রতিযোগিতায় থাকার জন্য কোম্পানিকে 4G নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি 5G পরিষেবা চালুও করতে হবে. এর জন্য মূলধনের খুবই প্রয়োজন। Goldman Sachs সম্প্রতি বলেছিল যে শুল্ক না বাড়ালে, Jio এবং Airtel-এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কোম্পানির আগামী 2 বছরে 65,000-83,000 কোটি টাকার নতুন মূলধনের প্রয়োজন হবে।
স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে
অন্যদিকে, ব্রোকারেজ হাউস নোমুরা বিশ্বাস করে যে স্বল্প সময়ের মধ্যে বৃহৎ পুঁজি হাতে পেলে কোম্পানিটি তার বকেয়া পরিশোধ করতে সক্ষম হবে, 5G চালু করতে সক্ষম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। কিন্তু তারপরও কোম্পানিটি পুরোপুরি সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। কারণ 5G পরিষেবা চালু করার পরে স্থিতিশীলতা অর্জন করতে সময় লাগবে। FPO ঘোষণার আগে CLSA শেয়ারের টার্গেট কমিয়ে 5 টাকা করেছে।
নতুন বিনিয়োগকারীদের কী করা উচিত?
এখন প্রশ্ন উঠছে Vi-এর বর্তমান এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের FPOতে বিনিয়োগ করা উচিত কি না? মতিলাল ওসওয়ালের মতে, “সুদ মেটানোর জন্য বড় অর্থের প্রয়োজন, এতটাই যে ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বড় সুযোগ সীমিত বলে মনে হচ্ছে। এমনকি যদি আমরা গ্রাহক পিছু গড় আয় বা ARPU (average revenue per user) বৃদ্ধির সুবিধাও ধরে নেই তাহলেও কম অপারেটিং প্রফিটের কারণে বাইরে থেকে টাকা না এলে সুদ পরিশোধ করাই মুশকিল হতে পারে।”
AUM ক্যাপিটাল-এর গবেষণা প্রধান রাজেশ আগরওয়াল বিশ্বাস করেন যে “বর্তমান বিনিয়োগকারীরা তাঁদের বিনিয়োগ ধরে রাখতে পারেন৷ কিন্তু FPO-তে টাকা বিনিয়োগ করা উচিত নয়।”
বৃদ্ধির আশা সামান্যই
সামগ্রিকভাবে, কোম্পানি যদি QIP-এর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করত, তাহলে স্টকে ঊর্ধ্বগতির সুযোগ থাকত কারণ এতে কোম্পানির প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আস্থার ধারণা পাওয়া যেত। 45,000 কোটি টাকার ফলে Vi ঘুরে দাঁড়াবে কিনা তা বলা কঠিন, তবে FPO থেকে বিশাল ডিসকাউন্টে শেয়ারে কোনও বড় উত্থানের আশা কমই. তাই শেয়ার থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে.
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App