মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওমপ্রকাশ পাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরেই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছেন করোনা অতিমারীর এই প্রকোপ যাতে তাড়তাড়ি শেষ হয়ে যায়। কারণ, ২০২০-এর জানুয়ারিতে অবসর নেওয়া ওমপ্রকাশ অবসরের জন্য যে সব পরিকল্পনা করেছিলেন, করোনার কারণে তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁর সঞ্চয়ের বেশিরভাগ অংশই খরচ হয়েছে পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতেই।
সারা দেশের করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছিল ঠিক দু-বছর আগে, কিন্তু এখনও তার প্রভাব শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বরং একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে দেশজুড়ে। গত বাজেটে করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য দেশের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সেরকম কোনও প্রস্তাব বাজেটে আনা হয়নি। তবে ওমপ্রকাশ এতে আশা ছাড়তে রাজি নন, তাঁর আশা এবার বাজেটে হয়তো অর্থমন্ত্রী কিছু প্রস্তাব রাখবেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য।
শুধু ওমপ্রকাশই নন, ভোপালে তাঁর মত বহু ষাটোর্ধ্ব নাগরিক থাকেন। যাঁরা তাঁদের সঞ্চয়ের উপর দাঁড়িয়ে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতে চান। কিন্তু করোনা সেই আশায় কার্যত জল ঢেলেছে। তাই এঁদের সকলেরই আশা বাজেটে অর্থমন্ত্রী তাঁদের জন্য কিছু দেবেন।
ওমপ্রকাশ সরকারি কর্মী হওয়ার কারণে পেনশন পান তাই তিনি অন্যান্য কোনওরকম সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান না। যদিও, যে কোনও বাজেটে নেওয়া একাধিক প্রস্তাব সরাসরি প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলে। তাঁদের খরচের দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট হয় যে পরিমাণ পেনশন তাঁরা প্রতিমাসে পান তা সংসার চালাবার জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণেই তাঁরা এমনকিছু সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের প্রকল্প চান যা প্রতি মাসে তাঁদের একটা ভদ্রস্থ রিটার্ন দেবে। ওমপ্রকাশ অবসর নেওয়ার পরে কিছু কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু করোনার কারণে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়।
সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩১ সালে দেশে মোট প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হতে পারে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি।
২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী দেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০.৩ কোটি, যা তৎকালীন জনসংখ্যার মাত্র ৮.৬ শতাংশ।
তাহলে আগের বাজেটে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কী ছিল?
আগের বছরের বাজেটে ৭৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর দাখিলের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
সাধারণত ৭৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের আয়ের একমাত্র উৎস প্রাপ্ত পেনশন এবং সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত সুদ। কিন্তু আয়কর আইনের ১৯৪পি ধারা অনুসারে ব্যাঙ্কগুলি প্রবীণ নাগরিকদের এই আয়ের উপরও TDS ধার্য করে থাকে। দেশের আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্র সেই সমস্ত লোককেই করের আওতার বাইরে রেখেছে যাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম। যাঁদের আয় আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে তাঁদের উপর করের পরিমাণ ৫ শতাংশ। যদিও, এর আওতায় থাকা লোকেরা সাড়ে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত একটা ছাড় পান, যাতে আখেরে তাঁদের কোনও কর দিতে হয় না। অন্যদিকে, প্রবীণ নাগরিকদের তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনও কর দিতে হয় না। আবার তাঁদের আয় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে সাধারণ নাগরিকদের মতই তাঁরাও আয়করে একটা ছাড় পেয়ে থাকেন।
বর্তমানে প্রবীণ নাগরিকেরা সরকার প্রবর্তিত দুটি সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রথমটি হল প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা এবং অন্যটি হল সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিম বা এসসিএসএস।
প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনায়, প্রবীণ নাগরিকরা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন৷ তারপর সেই বিনিয়োগের অঙ্কের উপর ভিত্তি করে তাঁরা এক হাজার টাকা থেকে ৯,২৫০ টাকা পর্যন্ত মাসিক পেনশন পেতে পারেন।
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তাঁরা সর্বাধিক ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রতি বছরে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল কোনও ব্যক্তি ৬০ বছর বয়সে পৌঁছে গেলে, তাঁর একটা স্থায়ী ও নির্দিষ্ট আয়ের উৎস তৈরি করা। বর্তমানে এই প্রকল্পে বার্ষিক সুদের হার ৭.৪ শতাংশ এবং আয়কর ছাড়ের ৮০সি ধারার অন্তর্ভুক্ত।
প্রখ্যাত কর বিশেষজ্ঞ বলবন্ত জৈনের মতে, “বর্তমানে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কোনও ভাল বিনিয়োগের প্রকল্প নেই৷ এই ধরনের মাত্র দুটি প্রকল্প বাজারে রয়েছে, এগুলি হল- সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম এবং প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা। এই দুটি প্রকল্পেই বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। সরকারের উচিত এই সীমা অবিলম্বে বাড়ানো। এ ছাড়া প্রবীণ নাগরিকদের ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোনও কর দিতে হয় না, এই পরিমাণ ন্যূনতম ৬ লক্ষ টাকা করা উচিত। তাহলে তাঁদের কিছুটা সুরাহা হবে।”
তাই চাহিদা খুব সামান্যই-
অন্য অনেকের মতই ওম প্রকাশেরও এই বাজেট থেকে প্রত্যাশা খুব সামান্যই। তিনি বাজেট থেকে শুধু এতটুকুই সুবিধা চান যা তাঁর দৈনন্দিন খরচ চালাতে সাহায্য করবে। আজকের এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে প্রাপ্ত পেনশন সংসার খরচ চালাবার জন্য যথেষ্ট নয়।
চিকিৎসার খরচ যেভাবে বেড়েছে, তাতে কার্যত নাভিঃশ্বাস উঠেছে সকলেরই। তাই তিনি চান, সরকার প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসা এবং আয়কর ছাড়ের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব এবারের বাজেটে আনুক কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি, ওমপ্রকাশের আশা করোনার পর কেন্দ্র দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতির লক্ষ্যে এই খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াবে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App