সারা বিশ্বের কোথায় কী হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে কোভিডের সময় যে ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি লাভ দিয়েছে, তা হল ভারতীয় শেয়ার বাজার।
কোভিডের সময় রাজস্থানের জয়পুর নিবাসী রাধেশ্যাম বনসাল বাজারে টাকা লগ্নি করে বিরাট আয় করেছিলেন। শেষ দু-বছরে বেশ কিছু সংস্থার শেয়ার থেকে তিনি ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করেছেন। পাশাপাশি, ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে করা বিনিয়োগ থেকে তিনি তাঁর বিনিয়োগের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি পর্যন্ত আয় করেছেন।
কিন্তু বর্তমানে বহু সংস্থার অত্যাধিক মূল্যায়ণ, সস্তা ঋণের অপ্রতুলতা এবং ঋণের ক্ষেত্রে চড়া সুদের হার এইসব কারণে শেয়ার বাজারের উপর বেশ খানিকটা চাপ বেড়েছে।
তাই রাধেশ্যাম, এখন আসন্ন বাজেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন যদি এই বাজেট শেয়ার বাজারের ভবিষ্যতের কিছুটা দিকনির্দেশ করতে পারে।
রাধেশ্যামের মত অনেক বিনিয়োগকারী আশা করছেন এবার বাজেটে এমন কিছু প্রস্তাব আনা হবে, যাতে শেয়ার বাজার তার উত্থানের গতি অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়ার আশাও করছেন।
কোভিডের সময় যখন বিভিন্ন ব্যবসা বন্ধ ছিল, তখন শেয়ার বাজার একের পর এক নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছিল। ২০২০ সালে সেনসেক্স বিনিয়োগকারীদের ১৬ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ২২ শতাংশ লাভ দিয়েছিল। যেখানে কোভিডের আগে, ২০১৯ সালে সেনসেক্স মাত্র ১৪.৩৭ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছিল।
গত দু-বছর ধরে অর্থাৎ কোভিডের সময় শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট, যা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য খোলা বাধ্যতামূলক তার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এই সময়ে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এর সংখ্যা ছিল ৩.৬ কোটি, তা ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৭ কোটিতে।
শেয়ার-সহ বিভিন্ন সিকিউরিটির ওপর সাধারণত তিন ধরনের কর লাগু হয়। আপনি যদি কেনার এক বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করেন, তাহলে আপনাকে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের লাভের অঙ্ক আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং তার উপর কর লাগু হয়।
এর পাশাপাশি, আপনি যদি এক বছর বাদে শেয়ার বিক্রি করেন, তাহলে আপনাকে মোট আয়ের উপর ১০ শতাংশ লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন কর দিতে হবে। তারপর আছে শেয়ারের লেনদেনের উপর লাগু হওয়া কর। বর্তমানে এই করের হার লেনদেন মূল্যের ০.০২৫ শতাংশ থেকে ০.২৫ শতাংশের মধ্যে।
শেয়ার বাজারের উত্থানের সময় কয়েক কোটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বাজারে বিপুল পরিমাণ লগ্নি করেছিলেন, যার থেকে সরকার একটা বড় কর পেয়ে থাকে।
২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য সরকার শেয়ার লেনদেন থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই সরকার এই খাতে ১৭,৩২৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এটি লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অর্থাৎ প্রাক-কোভিড সময়ে এই খাতে প্রাপ্ত করের চেয়ে এই অঙ্ক ৮,১৩০ কোটি টাকা বেশি।
২০১৮ সালের আগে শেয়ার বিক্রির উপর কোনও দীর্ঘমেয়াদী কর অর্থাৎ লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন কর ছিল না। কিন্তু ২০১৮-এর বাজেটে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল যদি একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করে এক লক্ষ টাকার বেশি লাভ করেন, তাহলে তাকে ১০ শতাংশ লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এটি ২০১৮ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।
ভ্যালু প্রলিফিক কনসাল্টিং সার্ভিসের ডিরেক্টর আংশুমান খান্না বলেন, “শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকারের উচিত লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন কর তুলে নেওয়া, তাতে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা হবে। এর ফলে যে ক্ষতি হবে, তার জন্যে সরকার শেয়ার লেনদেনের উপর করের হার বাড়াতে পারে। সরকার যদি এটা করে তাহলে বাজারে প্রচুর লগ্নি আসবে যা আখেরে দেশের অর্থনীতিকেই সাহায্য করবে।”
রাধেশ্যামও চান যে সরকার বিনিয়োগের উপর লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স তুলে নিক। অথবা অন্ততপক্ষে এর মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দু-বছর করুক। অর্থাৎ শেয়ার কেনার ২ বছর পর যে কোনও সময় তা বিক্রি করলে তবেই এই কর লাগু করা হোক।
তাঁর মতে, এক বছর বাদে লাগু হওয়া এই কর আখেরে খুচরো বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে এবং যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চাইছেন তাঁরাও পিছিয়ে যাবেন। বনসাল বলেন, যে কেউ যদি শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা করেন, অর্থাৎ প্রতিদিন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে অল্প সময়ের মধ্যে বেশ খানিকটা অর্থ উপার্জন করেন, তাহলে তাঁদের উপর কর লাগু করার মানে হয়। কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তাহলে সরকারের উচিত সেই ক্ষেত্রে লাগু কর তুলে নিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করা। তাই এই সংক্রান্ত কর তুলে নেওয়াই সমিচীন।
তিনি আশা করেন, এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এই সংক্রান্ত পরিবর্তন আনতে পারেন, যার জন্য বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App