Deep fake: বিশ্বাসে পকেট ফাঁকা; অবিশ্বাসেই মুক্তি

সম্প্রতি দিল্লি-NCR অঞ্চলে এই ধরনের প্রতারণার আরও কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। এগুলো ভয়েস ক্লোনিং স্ক্যাম হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি দিল্লির চাঁদনি চক এলাকায় এক জুয়েলার স্ক্যামের শিকার হয়েছেন। তিনি অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন পেয়েছিলেন। কলারের কণ্ঠস্বর তাঁর চেনা বলেই মনে হয়েছিল। কলার তাঁর নাম উল্লেখ করেন এবং এমারজেন্সি পরিস্থিতির দোহাই দিয় বলেন তাঁর কিছু টাকার দরকার। যেহেতু কন্ঠস্বরটি পরিচিত শোনাচ্ছিল, তাই জুয়েলার কিছু সন্দেহ না করেই প্রায় 10 লক্ষ টাকা তিনটি আলাদা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। কলার ফের টাকা চেয়ে ফোন করলে জুয়েলারের সন্দেহ বেড়ে যায়। সন্দেহ থেকে বিষয়টি নিয়ে তিনি যখন প্রশাসনের দ্বারস্থ হোন তখন জানা যায় কলটি কোনও পরিচিত ব্যক্তি নয় একজন সাইবার স্ক্যামার করেছিল।

একইভাবে, সম্প্রতি দিল্লি-NCR অঞ্চলে এই ধরনের প্রতারণার আরও কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। এগুলো ভয়েস ক্লোনিং স্ক্যাম হিসেবে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য শিশুদের কণ্ঠস্বর নকল করা হয়। সাইবার প্রতারকরা হুমকি দিয়ে ফোন করে। তারা হুমকি দেয় যে, দাবি পূরণ না হলে শিশুদের criminal case-এ ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। টাকা পাঠালেই সন্তানদের ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানানো হয়।

যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনাকে বোকা বানানো হচ্ছে, তখন আপনি আপনার সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবেন। যাতে আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে, আপনার সন্তান সত্যিই সমস্যায় পড়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আপনি আতঙ্কিত হয়ে স্ক্যামারদের কাছে টাকা পাঠাতে পারেন। পরে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার সন্তান সেই ফোনে ছিল না। কিছু উন্নতধরণের সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে তাঁর ভয়েস ক্লোন করে ফোনটি করা হয়েছিল। সাইবার অপরাধীরা AI-ভিত্তিক ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের কণ্ঠস্বর, মুখ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য কপি করে এবং তারপর তাঁদের বন্ধু,পরিচিত বা পরিবারের সদস্যদের প্রতারিত করে। এই AI চ্যাটবটটির নাম FraudGPT বা WormGPT।

McAfee Corp-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, 18 বছর বা তার বেশি বয়সী ভারতীয়দের মধ্যে 47%-এরও বেশি এই ধরনের AI ভয়েস কল পেয়েছেন বা এমন কাউকে চেনেন যিনি এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন। এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গড়ে 25% এর প্রায় দ্বিগুণ।

রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে AI ব্যবহার করে কারো ভয়েস ক্লোন করতে মাত্র 3 সেকেন্ডের অডিও লাগে। এখন প্রশ্ন হল, সাইবার অপরাধীরা কীভাবে এগুলি করেন? কীভাবে তারা আপনার তথ্য, আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সম্পর্কে তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে?

এর উত্তর রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ব্যবহারকারীরা তাঁদের অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য সামগ্রী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন। এমন কিছু লোক আছে যাঁরা ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়া নিরীক্ষণ করে এবং মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে। তাঁরা সাইবার অপরাধীদের কাছে এই তথ্য, ডেটা বিক্রি করে। এইভাবে সাইবার অপরাধীদের কাছে আপনার তথ্য চলে যায়। আপনার পরিচিত, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তারা এটি ব্যবহার করে। সেইসঙ্গে, তাঁরা ক্লোনিংয়ের জন্য আপনার অডিও, ভিডিও ব্যবহার করে এবং তারপর প্রতারণা করে।

কীভাবে এই ধরনের স্ক্যাম থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন?

এই ধরনের স্ক্যাম এড়াতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা অপরিহার্য। অজানা নম্বর থেকে কল রিসিভ করলে আর এই ধরণের কোনও বিষয় হলে অন্তত একশটি প্রশ্ন করুন। যদি তাঁরা পুলিশ বলে দাবি করে, তাহলে জিজ্ঞেস করুন তাঁরা কোন থানা থেকে ফোন করছে। অনলাইনে ওই থানার নম্বর সার্চ করুন। প্রয়োজনে সেখানে কল করুন এবং কলার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। আপনি যে ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন তা চিনতে পারলে অবিলম্বে তাঁদের পার্সোনাল নম্বরে কল করুন। যেকোনও কলে এমার্জেন্সি স্টেপ নেওয়ার রিকোয়েস্ট করা হলে সতর্ক থাকুন। এছাড়াও, আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল লক করতে পারেন। এইভাবে, আপনার বন্ধু এবং ফলোয়ার ছাড়া অন্য কোন অজানা ব্যক্তি আপনার তথ্য অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হবেন না।

Published: February 27, 2024, 14:08 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App