ব্যাঙ্ক গুরুত্ব না দিলে কী করবেন?

দিন দিন ব্যাঙ্কিং ওমবাডসম্যানের কাছে দায়ের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাঙ্ক ওমবডাসম্যানের কাছে কী কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে।

সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছিলেন নমিত। জালিয়াতরা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট প্রায় খালি করে দিয়েছিল। তুলে নিয়েছিল 50 হাজার টাকা। নমিত সাইবার সেল এবং ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

তিনি ব্যাঙ্কে গিয়ে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ব্যাঙ্ক তাঁর ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলেছিল।

এই নিয়ে অনেক চিঠিচাপাটি করেছিলেন নমিত। দুঃখের কথা হল, তার পরেও ব্যাঙ্ক কিছুই করেনি।

আর কোনও উপায় না দেখে নমিত শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের Banking Ombudsman-এর দ্বারস্থ হন।

নমিতের মতো বহু মানুষ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে Banking Ombudsman-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

কখনও অভিযোগ করা হয় ব্যাঙ্কের খারাপ পরিষেবা নিয়ে। আবার সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় রিকভারি এজেন্টদের হাতে হয়রানি অভিযোগও জমা পড়ছে প্রচুর।

দিন দিন ব্যাঙ্কিং ওমবাডসম্যানের কাছে দায়ের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাঙ্ক ওমবডাসম্যানের কাছে কী কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে। আর এর মধ্যে কোন ধরনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। আসুন জেনে নেওয়া যাক। পাশাপাশি আপনি কখন এবং কীভাবে ব্যাঙ্কিং ওমবডসম্যানের কাছে অভিযোগ করতে পারেন, তারও বিশদ তথ্য রইল এই প্রতিবেদনে।

তাহলে শুরু করা যাক?

ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায় পড়লে প্রথমে আপনি ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে অভিযোগ না শুনলে ব্যাঙ্কের শাখায় যান। সেখানে আপনাকে নোডাল অফিসারের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে।

অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিটি ব্যাঙ্কের একজন নোডাল অফিসার থাকে। ব্যাঙ্ক এক মাসের মধ্যে আপনার অভিযোগের সমাধান না করলে বা ব্যাঙ্কের থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেলে আপনি তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের Banking Ombudsman-এর দ্বারস্থ হতে পারেন।

আপনি দু’ভাবে Banking Ombudsman-এর কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন – অনলাইন এবং অফলাইনে। অফলাইন অর্থাৎ আপনি ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে একটি সাধারণ কাগজে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। উল্টোদিকে, অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে Banking Ombudsman-এর পোর্টাল cms.rbi.org.in-এর মাধ্যমে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের Financial Stability Report অনুসারে, গত বছর দু’টি ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ 2023 সালের এপ্রিল-জুন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত বেশিরভাগ অভিযোগ লোন এবং অ্যাডভান্স, মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক ব্যাঙ্কিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড সংক্রান্ত। মোট যত অভিযোগ জমা পড়েছে তার মধ্যে 60 শতাংশের বেশি ছিল এই সমস্ত সংক্রান্ত।

এর মধ্যে আবার সবথেকে বেশি সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েছে ঋণ এবং অ্যাডভান্স এবং unfair practice code সংক্রান্ত। সময়মতো ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় রিকভারি এজেন্টদের হাতে হয়রানির অভিযোগ করে Banking Ombudsman-এর কাছে নালিশ করেছেন সবথেকে বেশি ব্যাঙ্ক গ্রাহক।

রিকভারি এজেন্টদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে ব্যাঙ্কগুলির জন্য ইতিমধ্যে গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, রিকভারি এজেন্টদের সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চলতে হবে এবং কোনও ভাবেই রিকভারি এজেন্টরা ঋণ গ্রাহকদের হয়রান করতে পারবে না।

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে এই ধরনের অভিযোগের অংশ ছিল 24.03% এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে তা ছিল 23.55 শতাংশ।

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে 16 হাজারেরও বেশি এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সঠিক সংখ্যাটা 16,607টি। যেখানে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এই সংখ্যা ছিল 17,732টি। এই সময়ের মধ্যে, মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল যথাক্রমে 18.23 এবং 16.72 শতাংশ। যেখানে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগে ছিল যথাক্রমে 14.53 এবং 13.54 শতাংশ। একইভাবে, ডেবিট কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল যথাক্রমে 9.62 এবং 10.21 শতাংশ।

উভয় ত্রৈমাসিকে সব মিলিয়ে Banking Ombudsman-এর কাছে 1 লক্ষ ৪৪ হাজারের মতো অভিযোগ জমা পড়েছে।

এ থেকে স্পষ্ট যে দেশে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সংস্কার ও নিয়মকানুন কঠোর করার প্রয়োজন আছে। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলিকে আরও বেশি করে দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে।

Published: February 26, 2024, 14:41 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App