ডিজিটাল ঋণের নাগপাশ হোক শেষ বিকল্প

ফিনটেক অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজিউমার এমপাওয়ারমেন্ট অর্থাৎ FACE- এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ডিজিটাল ঋণের বাজার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোভিডের সময় ভারতে বেশ কয়েকটি অ্যাপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল যেগুলি ইন্সট্যান্ট লোন দিয়ে থাকে। কোভিড এবং তার পরবর্তী সময়ে লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বিশেষত, আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষরা এই অ্যাপগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। দেশে এই অ্যাপগুলির জনপ্রিয়তার মাত্রা থেকে বোঝা যায় ডিজিটাল লেনদেনের বাজার কেমন বেড়েছে। 2012 সালে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ মাত্র 900 কোটি ডলার ছিল। কিন্তু 2020 সালে এটি 15,000 কোটি ডলার হয়েছে। বৃদ্ধি 15 গুণেরও বেশি। 2023 সালের শেষ নাগাদ এটি প্রায় 35,000 কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।

ফিনটেক অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজিউমার এমপাওয়ারমেন্ট অর্থাৎ FACE- এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ডিজিটাল ঋণের বাজার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। FY23-এ, ডিজিটাল ঋণ দেওয়া হয়েছে 92,848 কোটি টাকা, যা আগের বছরে মাত্র 35,490 কোটি টাকা ছিল।

Generation Z, অর্থাৎ 1996-এর পরে যাঁরা জন্মেছেন তাঁরা ডিজিটাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। এই প্রজন্ম ব্যাঙ্কে যেতে পছন্দ করেন না। পাশাপাশি লোন সুরক্ষিত করার জন্য কাগজপত্রের দীর্ঘ ঝামেলাও পছন্দ করেন না। ডিজিটাল লোন তাঁদের কাছে সহজ পথ। এই ধরনের লোন এই প্রজন্মের কাছে পছন্দের হয়ে উঠেছে।

উপরন্তু, কমজোর ক্রেডিট হিস্টরি বা কম ক্রেডিট স্কোর রয়েছে এমন ব্যক্তিরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ সুরক্ষিত করা কঠিন বলে মনে করেন। তাই তাঁরা ডিজিটাল লোন বেছে নেন। এই কারণেই ডিজিটাল লোনের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল লোন নেওয়ার আগে এর শর্তাবলী ভালভাবে বুঝতে হবে। কারণ, একটি ডিজিটাল লোন পাওয়া সহজ হলেও এর লোকসান থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ সমস্যার হতে পারে।

ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দেয় FREED। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রিতেশ শ্রীবাস্তবের মতে, ডিজিটাল ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ ভারতে, এই ঋণের বার্ষিক শতাংশ হার বা APR 36 থেকে 48 শতাংশের মধ্যে হতে পারে। এর মানে হল প্রতি 100 টাকা ঋণে আপনাকে 48 টাকা পর্যন্ত বার্ষিক সুদ দিতে হতে পারে। এছাড়াও, ঋণদাতা এবং collection agent-রা ক্রমাগত আপনাকে ফোন করে এবং মেসেজ করে বিরক্ত করতে পারে, যদি আপনি পেমেন্ট মিস করেন।

আর্থিক উপদেষ্টা নিমা ছায়া বুচ পরামর্শ দিয়েছেন যে স্বল্পমেয়াদে ইন্সট্যান্ট লোন ঋণ সহজে পাওয়া যায়। তবে সাবধানতার সঙ্গে সবদিক বিবেচনা না করে আবেদন করা উচিত নয়। শুধুমাত্র যখন আপনার কাছে অন্য কোনও অপশন নেই এবং এটি জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন তখনই শুধুমাত্র এই ধরনের ঋণ বেছে নিন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিশ্চিত করতে হবে যে ঋণের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উচিত সুদের হার পরীক্ষা করা, ক্রেডিট হিস্টরি মূল্যায়ন করা, পরিশোধের সময় দেখা এবং তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে আপনি এই ধরনের ঋণ নিতে পারবেন কিনা। একটি ইন্সট্যান্ট লোনের জন্য আবেদন করার আগে এর ঝুঁকিগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝ নিতে হবে। কারণ এর পরিণতি পরে মারাত্মক হতে পারে।

তাই যখনই আপনি একটি ডিজিটাল লোন নেবেন তখন কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন। প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনি যেখান থেকে ঋণ নিচ্ছেন সেটি regulated বা কোনও প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদি এটি একটি regulated entity হয়, যেমন একটি ব্যাঙ্ক বা NBFC তাহলে সেখান থেকে লোন নেওয়া নিরাপদ৷ একটি regulated entity মানে এটি RBI নিয়ন্ত্রণের অধীনে৷ গ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে একজনের উচিত গুগল প্লে স্টোর থেকে রেটিংও পরীক্ষা করা। এটি আপনাকে সেই অ্যাপগুলিকে ফিল্টার করতে সাহায্য করবে৷ জরুরী ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র একটি ডিজিটাল লোন নিন। অন্যথায়, এটি এড়াতে চেষ্টা করুন।

Published: January 24, 2024, 14:55 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App