ডিজিটাল অ্যারেস্ট: প্রতারণার নতুন উপায়

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 2022-23 সালে ডিজিটাল জালিয়াতির 6,659টি ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে। এতে মোট 276 কোটি টাকা প্রতারণা হয়েছে।

কয়েক মাস আগে গুপ্তিপাড়ার সাক্ষী 7 লক্ষ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এই প্রতারণার ঘটনাটি অন্যান্য সাইবার জালিয়াতির থেকে আলাদা ছিল কারণ এই পদ্ধতিটি একেবারেই নতুন। আইনের হাতে ধরা না পড়ার জন্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন প্রতারকেরা।

প্রতারকেরা প্রথমে সাক্ষীকে ফোন করে। যে ব্যক্তি ফোন করেছিল সে সাক্ষীকে বলে যে সে একটি ক্যুরিয়ার সংস্থা থেকে ফোন করছে। তাঁর একটি ক্যুরিয়ারটি কাস্টমস বিভাগ আটকেছে। একইসঙ্গে সেই ব্যক্তি সাক্ষীকে তাঁর আধার নম্বরও বলে দেয়। এতে সাক্ষী স্বভাবতই খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। তারপর ওই ব্যক্তি জানান তাঁর আধার দিয়ে বেশ কিছু বেআইনি কাজ করা হয়েছে। সে আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওই ফোন কল মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার করা হচ্ছে বলে জানান। এরপর সাক্ষীকে একটি স্কাইপ কলে যোগ দিতে বলা হয়। ভয় পেয়ে সাক্ষী সেই কলে জয়েন করে দেখেন এক ব্যক্তি মুম্বই পুলিশের একটি লোগোর সামনে বসে রয়েছে। সেই ব্যাক্তি সাক্ষীকে বলে যে তাঁর আধার নম্বর দিয়ে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

প্রতারকেরা সাক্ষীকে জানায় যে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ তছরুপ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দিতে হবে। এভাবে সাক্ষীর থেকে প্রায় 7 লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকেরা। সেই সময় তারা জানিয়েছিল যে সব খতিয়ে দেখে তারপর এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা ট্রান্সফার করার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন কলটি কেটে যায়। প্রতারণার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডিজিটাল অ্যারেস্ট। এরকম নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই ক্ষেত্রে, আইনের ভয় দেখিয়ে মানুষকে প্রতারিত করা হয়। যদিও এই নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই।

এই কেলেঙ্কারিতে সাইবার জালিয়াতেরা আমজনতাকে এভাবে বিভ্রান্ত করে থাকে। তারা নিজেদের পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়। ভুল তথ্য দিয়ে তারা কঠোর আইনি পদক্ষেপের ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। সাম্প্রতিক অতীতে দেশে ডিজিটাল অ্যারেস্ট কেলেঙ্কারির অনেকগুলি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে সাইবার জালিয়াতির সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 2022-23 সালে ডিজিটাল জালিয়াতির 6,659টি ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে। এতে মোট 276 কোটি টাকা প্রতারণা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর অগাস্ট পর্যন্ত সাইবার জালিয়াতির 25,000টির বেশি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। যেখানে 2022 সালের অগাস্ট পর্যন্ত 8,000 ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। এর থেকেই স্পষ্ট মাত্র এক বছরের মধ্যে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।

ডিজিটাল অ্যারেস্ট এখন সাইবার জালিয়াতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠছে, এটা এড়াতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিজেকে সচেতন করুন। সজাগ থাকুন। সর্বদা যাচাই করুন কে আপনাকে কল করছে। কেউ যদি নিজেকে পুলিশ আধিকারিক বলে দাবি করে তাহলে তার অফিসিয়াল আইডি দেখতে চান।

এরকম ঘটনা ঘটলে কখনই ভয় পাবেন না বা ঘাবড়ে যাবেন না। বরং আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতিটি বুঝুন। যদি এরকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে এভাবে ফোন আসবে না। বরং আপনি এই ঘটনা ঘটলে নিকটবর্তী থানায় যোগাযোগ করুন।

পাশাপাশি, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কখনই কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। বিশেষ করে ব্যাঙ্কিং বা সেরকম কিছু ব্যক্তিগত তথ্য কোনও অচেনা ব্যক্তিকে জানাবেন না। আপনি যদি কখনও এমন পরিস্থিতির শিকার হন তাহলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

Published: January 10, 2024, 14:13 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App