ঋণ মকুবের ফোন শয়তানের কন্ঠস্বর

প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে RBI এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন সম্পর্কে মানুষকে সতর্কও করেছে।

শুক্লা একটি ফোন কল রিসিভ করেন। কলার বলেন যে তিনি State Bank থেকে কল করছেন। শুক্লাকে জানানো হয় তাঁর লোনের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে বা loan restructure করা হচ্ছে। তাই আলোচনা করার জন্য তাঁকে ডাকা হচ্ছে। কলার এও জানান যে শুক্লা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে একটি large ticket loan নিয়েছেন। তাঁর লোন রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটাস চেক করার পাশাপাশি লোন মকুবের প্রসেস করার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা হয়েছে।

শুক্লা জানতে চান লোন মকুব কী? কলার জানান, এর মানে ব্যাঙ্ক 10 বছরের পুরনো ঋণ মকুব করার জন্য একটি স্কিম চালু করেছে। শুক্লার নেওয়া ঋণ এর জন্য শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তিনি শুক্লাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কত বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন? শুক্লা জানান, তিনি 10 লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছিলেন।

কলার বলেন, তাঁকে এখন 40,000 টাকা দিতে হবে এবং বাকি ঋণ মকুব করা হবে। তারপর ব্যাঙ্ক তাঁর নামে ঋণ মকুবের জন্য একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করবে। শুক্লা অবাক হয়ে যান। কলার আরও একবার গোটা বিষয়টি শুক্লাকে বোঝান। শুক্লা এতে প্রলুদ্ধ হয়ে জানায় সে টাকা পাঠাবে।

এক মুহুর্ত দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়েও দেন শুক্লা। ব্যাঙ্ক ঋণ মকুবের সার্টিফিকেট ইস্যু করে। যদিও এই সার্টিফিকেটটি তাঁর কোনও কাজে আসেনি। কারণ কলার, ঋণ মকুবের স্কিম এবং সার্টিফিকেট সবই জাল। শুক্লা এখন তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত। তিনি তাঁর সব টাকা হারিয়েছেন। বাস্তবে, ব্যাঙ্কগুলি কখনই এমনভাবে ঋণ মকুব করে না। শুক্লা সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছিলেন এবং এই ধরনের জালিয়াতি ব্যাঙ্ক লোন ওয়েভার জালিয়াতি নামে পরিচিত।

ঋণ মকুব করা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনগুলি ক্রমশ বাড়ছে। ঋণ মকুবের অফারগুলি প্রিন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিজ্ঞাপন আকারে দেওয়া হচ্ছে ৷ প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে RBI এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন সম্পর্কে মানুষকে সতর্কও করেছে। RBI জানিয়েছে যে, তাঁরা তথ্য পেয়েছে যে কিছু সংস্থা কোনও Authority ছাড়াই ঋণ মকুবের শংসাপত্র ইস্যু করছে। এছাড়াও, তারা সার্ভিস বা লিগাল ফি চার্জ করে। এই ধরনের কার্যক্রম আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আমানতকারীদের স্বার্থের ক্ষতি করে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জনগণকে এই জাল এবং প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের শিকার না হওয়ার জন্য আবেদন করছে। RBI পরামর্শ দিয়েছে যে তাঁদের অবশ্যই এই ধরনের ঘটনা আইনিভাবে রিপোর্ট করতে হবে।

এখন দেখা যাক কীভাবে এই স্ক্যাম করা হচ্ছে?

বাস্তবে, সাইবার জালিয়াতির মানুষকে ফোন করে এবং তাঁদের বিশ্বাস করায় যে তাঁরা তাদের ঋণ মকুব করবে। শুধু ব্যক্তি নয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এর শিকার হন। এই সাইবার জালিয়াতরা নিজেদের ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেন। তাঁরা ক্লেম করেন যে সরকারের একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তাঁরা গ্রাহকদের ঋণের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তাঁরা দাবি করে যে এর একটি অংশ মকুব করা হবে। তারপরে, তারা গ্রাহককে আধার এবং প্যানের তথ্য দিতে বলে। গ্রাহককে মোট ঋণের পরিমাণ থেকে শুধুমাত্র 30, 40, বা 50 হাজার টাকা দিতে হবে, বাকিটা written off হয়ে যাবে। ব্যাঙ্ক তাদের একটি সার্টিফিকেটও দেবে যে তাদের ঋণ মকুব করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে, Indian Banks’ Association-এর সিনিয়র উপদেষ্টা বিকাশ নারায়ণ মিশ্র পরামর্শ দেন যে প্রতারকরা সর্বদা মানুষকে প্রতারিত করে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাঁদের শিকারে পরিণত হয়। Middlemen বা জাল এজেন্টরা লোকেদের বলে যে তাঁরা তাঁদের ঋণ মকুব করবে অথবা তাঁরা তাঁদের টাকা দ্বিগুণ করবে। শুধু তাই নয় তাঁদের একটি নতুন লোনের অফারও দেওয়া হয়। তারা এজেন্ট বা ব্যাঙ্ক বা NBFC-এর প্রতিনিধিদের ছদ্মবেশে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদি আপনি এই ধরনের কল পান বা অন্য কোনও উপায়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তাহলে আপনি সরাসরি ব্যাঙ্কে যান। ব্যাঙ্ককে জিজ্ঞাসা করুন এই ধরনের স্কিম সত্যিই আছে কিনা। থার্ড পার্টির কথায় বিশ্বাস করা উচিত নয়। যেহেতু সাইবার জালিয়াতি ক্রমাগত বাড়ছে, তাই জনগণের সচেতন হওয়া অপরিহার্য।

ভারতে ব্যাঙ্কগুলি সর্বদা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। ব্যাঙ্ক ছাড়াও মানুষ NBFC থেকে ঋণ নেন। ব্যাঙ্কগুলি professional এবং personal উভয় উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করে। ঋণ দেওয়ার আগে একটি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। FY22-এ, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া খুচরো ঋণের পরিমাণ 34 লক্ষ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারী 2023 পর্যন্ত, ব্যাঙ্কগুলির বকেয়া ব্যক্তিগত ঋণের ব্যালেন্স ছিল 40 লক্ষ কোটি টাকা৷ যা গত বছরের তুলনায় 20% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঋণ মকুবের স্ক্যামের ফাঁদে পা দেবেন না। আপনি যদি এমন একটি কল পান তবে একটু বিচক্ষণতার সঙ্গে কথা বলুন। ব্যাঙ্ক কেন আপনার লক্ষ লক্ষ টাকার ঋণ মকুব করবে? ব্যাঙ্কগুলি এভাবে ঋণ মকুব করলে ব্যাঙ্কগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। একমাত্র সরকার যখন ঘোষণা করে তখনই ঋণ মকুব করা হয়। সাধারণত, এটি নির্বাচনের সময়ে ঘটে থাকে। এমনকি যখন সরকার ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করে, ব্যাঙ্ক সেই ঋণগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়। সুতরাং সচেতন থাকুন এবং সতর্ক হোন। এই ধরনের ফ্রড কল এবং ভুয়ো এজেন্ট থেকে সাবধান থাকুন।

Published: January 5, 2024, 13:52 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App