ঋণের ফাঁদ এড়াতে সোনা হারাবেন না

ভারতে সোনার ঋণের সংগঠিত বাজার প্রায় 6 লক্ষ কোটি টাকার। এতে, ব্যাঙ্কগুলির অংশীদারিত্ব 80% এবং NBFC-র অংশীদারিত্ব 20%।

ব্যবসায় লোকসানের কারণে বিপর্যস্ত গড়বেতার গোবিন্দ। তিনি একটি ফাইন্যান্স সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া 40 লক্ষ টাকা ঋণ কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। টিভিতে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে আগের ঋণ শোধ করেছিলেন। কিন্তু ব্যবসা ঠিকমতো না চলার কারণে গোবিন্দ এই স্বর্ণ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি।

সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়ার পর সেই ফাঁদে আটকে থাকা গোবিন্দের দুর্দশা একার নয়। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে সোনা নিলামের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। ঋণ পরিশোধে অপারগতার কারণে প্রতি বছর গোবিন্দের মতো হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত তাঁদের সোনা খোয়ান।

গোল্ড লোন নেওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। মুথুট এবং মনপ্পুরমের মতো সংস্থা থেকে ঘরে বসেও ঋণ পাওয়া যায়। গোল্ড লোন নিতে শিক্ষা বা ব্যক্তিগত ঋণের মতো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল সোনার ঋণের ক্ষেত্রে কোনও উর্ধ্বসীমা নেই। ঋণের নিরাপত্তার কারণে ব্যাঙ্কগুলি সহজেই তা মঞ্জুর করে। তাই বাজারে এই ঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

ভারতে সোনার ঋণের সংগঠিত বাজার প্রায় 6 লক্ষ কোটি টাকার। এতে, ব্যাঙ্কগুলির অংশীদারিত্ব 80% এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলির অংশীদারিত্ব 20%। সম্প্রতি বড় ব্যাঙ্কগুলি এই ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়াচ্ছে। RBI-এর পরিসংখ্যান বলছে যে সোনার ঋণের বকেয়া 2023-এর জুলাইয়ে বেড়ে 95,746 কোটি টাকা হয়েছে। যা গতবছরের জুলাই-এর তুলনায় 23.1% বেশি।

ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ অমিত কুমার তানওয়ারের পরামর্শ, দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই ঋণ মূল্যায়ন করার অভ্যাস নেই। কোন ঋণ নেওয়ার আগে, একজনকে সম্পদ এবং তার দায় মূল্যায়ন করা উচিত। যার অর্থ, তাঁর ঋণ এবং তা পরিশোধের জন্য ক্ষমতা কতটা তা যাচাই করে নেওয়া। অনেক সময় মানুষ আগের ঋণ পরিশোধের জন্য স্বর্ণ ঋণ নিয়ে থাকে। এই ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে সঞ্চয়ের সোনাও হাতছাড়া হয়।

তানওয়ার জানান, অনেক সময় সোনার নিলামের পরেও ঋণের বকেয়া থেকে যায়। ব্যাঙ্ক কিংবা আর্থিক সংস্থাগুলি এর উপর সুদ নিয়ে থাকে। এইভাবে বেশ কয়েকবার সোনা নিলাম হওয়া সত্ত্বেও, কেউ ঋণ থেকে মুক্তি নাও পেতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণ না নিয়ে বিক্রি করাই ভালো।

নিজের সম্পদের তুলনায় আপনার দায় বেড়ে গেলে, নতুন ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সম্পদ বিক্রি করে ঋণের বোঝা কমানোর চেষ্টা করুন। আপনি যদি সোনার ঋণের EMI দিতে অক্ষম হন, তাহলে ঋণদায়ী সংস্থায় যান এবং ঋণ রিস্ট্রাকচার করার অনুরোধ করুন। সোনার মূল্য ঋণের তুলনায় বেশি হলে আপনি ঋণের মেয়াদ বাড়াতে পারেন।

যদি আপনার ঋণদায়ী সংস্থা এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য না করে, তাহলে আপনি অন্য সংস্থায় বা ব্যাঙ্কে ঋণ স্থানান্তর করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। যদি ঋণ পরিশোধের জন্য পথ খুঁজে না পান, তাহলে কয়েক দিনের জন্য বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারেন। পরে ছাড়িয়ে আনা সোনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করুন। আপনি যদি এই প্রচেষ্টায় সফল হন তবে আপনি বড় ক্ষতি এড়াতে পারবেন। গোবিন্দের মতো পরিস্থিতি এড়াতে সামর্থ্য অনুযায়ী ঋণ নিন। একটি ঋণ শোধ করার জন্য নতুন করে ঋণ গ্রহণ করবেন না।

আপনি যদি নিজে ঋণের ফাঁদে পড়ে যান তবে কিছু সম্পদ বিক্রি করে তা পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সামান্য অবহেলাই মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ঠিক যেমনটা হয়েছে গোবিন্দের ক্ষেত্রে।

Published: December 14, 2023, 14:16 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App