মাল্টিব্যাগার: স্বপ্নের রিটার্ন কোন পথে

আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি অবশ্যই "মাল্টিব্যাগার" শব্দটি শুনে থাকবেন।

আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি অবশ্যই “মাল্টিব্যাগার” শব্দটি শুনে থাকবেন। আপনি কি জানেন মাল্টিব্যাগার বিষয়টি আসলে কী? কীভাবে এই ধরনের শেয়ার নির্বাচিত করা হয়? তাহলে আপনাকে আমাদের এই প্রতিবেদন দেখতেই হবে।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক মাল্টিব্যাগার শেয়ার বিষয়টি কী। যে সকল শেয়ার ক্রয়মূল্যের চেয়ে ন্যূনতম দুইগুণ বা তার বেশি রিটার্ন প্রদান করে তখন তাকে মাল্টিব্যাগার শেয়ার বলা হয়। অন্য কথায়, এগুলি এমন শেয়ার যা প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণের চেয়ে অনেক গুণ বেশি বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ACE এবং Elecon ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো শেয়ারগুলি গত 5 বছরে 750% থেকে 1300% পর্যন্ত রিটার্ন প্রদান করেছে৷

আবার কিছু শেয়ার এক বছরের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে। এগুলি হল- REC, আনন্দ রাঠি ওয়েলথ, PFC প্রভৃতি। এরা বিনিয়োগের চেয়ে ইতিমধ্যেই তিনগুণেরও বেশি রিটার্ন প্রদান করেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞ অম্বরীশ বালিগার মতে মাল্টিব্যাগার হল এমন শেয়ার যা 3-4 বছরে 100% এর বেশি রিটার্ন প্রদান করেছে। বর্তমান বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু শেয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে কয়েকগুণ রিটার্ন প্রদান করেছে। Titagarh Wagons মাত্র 18 মাসে দশগুণ বেড়েছে। যে শেয়ার বছর দেড়েক আগে ছিল 100 টাকার নিচে, তা বর্তমানে 1000 টাকার উপরে চলে গিয়েছে।

এখন, প্রশ্ন হল, মাল্টিব্যাগার স্টক কীভাবে নির্বাচন করবেন। মাল্টিব্যাগার স্টক শনাক্ত করার জন্য আমাদের 4-5টি বিষয় দেখতে হবে।

এর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হল ঋণ। আদর্শ পরিস্থিতি হল, কোনও সংস্থার ঋণ না থাকাই উচিত। তবে কিছু ঋণ থাকা সবসময় খারাপ নয়, যতক্ষণ না এটি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে। তবুও, একটি কোম্পানির ঋণ ও ইক্যুইটির অনুপাত কোনওভাবেই 3:1-এর ওপর হওয়া উচিত নয়।

দ্বিতীয় মানদণ্ড হল সংস্থার আর্থিক ফলাফল। যে কোনও সংস্থার জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আয় বৃদ্ধির উপর নজর দেওয়া অপরিহার্য। যদি একটি সংস্থা কম আয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও অপারেশনাল স্তরে ভাল কর্মক্ষমতা দেখায়, তাহলে তা ইতিবাচক বিষয় হিসেবেই গণ্য করা হয়।

তৃতীয় মাপকাঠি হল সংস্থার আয়ের উৎস। মানে যে উৎসগুলি থেকে একটি সংস্থা তার মুনাফা পেয়ে থাকে। আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি, একটি সংস্থার লাভের উৎসের দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ মাপকাঠি হল ব্যবসার মডেল, সম্প্রসারণ ক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের উপর নজর রাখা। সংস্থার ত্রৈমাসিক ফলাফল বা বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করাও অপরিহার্য। কারণ এই পরিবর্তনগুলি সংস্থার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

অম্বরীশ বালিগার মতে, একটি শেয়ার নিশ্চিত মাল্টিব্যাগার হয়ে উঠবে বলে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা মুশকিল। তবে নিয়মিতভাবে বাজার পর্যালোচনা করা এবং কোন শেয়ারে মুনাফা ধরে রাখা বা বুক করা উচিত তা মূল্যায়ণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনও কখনও দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার ধরে রাখলে সেই শেয়ার মাল্টিব্যাগার হয়ে যায়। মাল্টিব্যাগার হয়ে ওঠা সংস্থাগুলির কর্পোরেট গভর্নেন্স শক্তিশালী হয় এবং স্বল্প মেয়াদে তাদের ব্যবসা দ্রুত বাড়ে।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কোন তিনটি বা চারটি স্টক পরবর্তী 10, 15 বা 20 বছরে মাল্টিব্যাগার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? অম্বরীশ বালিগার মতে, যদি কেউ পর্যালোচনা করে নিয়মিত একটি ভাল শেয়ারে লগ্নি করেন এবং তা 16% CAGR অর্জন করে তাহলে সেই স্টকটির 5 বছরে দ্বিগুণ রিটার্ন দেবে। সেই শেয়ার 20 বছরে 20 গুণ বৃদ্ধি পাবে। মাহিন্দ্রা হলিডেজ, ভারত ফোর্জ, ইয়েস ব্যাঙ্কের মতো শেয়ারগুলির মাল্টিব্যাগার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সবশেষে বলা যায়, মাল্টিব্যাগার শেয়ার নির্বাচন করতে গভীর গবেষণা এবং পড়াশোনা প্রয়োজন। নিয়মিত পর্যালোচনা করে শেয়ারগুলি 10, 15 বা 20 বছরের জন্য ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলেই আপনি এর ফল লাভ করতে পারবেন।

Published: December 21, 2023, 14:52 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App