আটা-ময়দার শক্তি পকেটস্থ করুন

সংস্থা তার বর্তমান গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে এবং নতুন গ্রাহক ধরতে সংস্থা শীঘ্রই দৈনিক 350 টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কারখানা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।

বেশ কিছুদিন বাদে চম্পকের দেখা মিলল। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই বন্ধুর কাছে চম্পক জানতে চায় কী এমন সংস্থা আছে যেখানে লগ্নি করলে ভাল লাভ মিলবে। চম্পকের এই প্রশ্নের জবাবে তাঁর বন্ধু জানান এরকমই একটি সংস্থা হল মেগাস্টার ফুডস। এই সংস্থা আটা-ময়দার ব্যবসা করে থাকে। চম্পক এই কথা শুনে নাক কুঁচকে বলেন, শেষ পর্যন্ত ময়দার সংস্থায় লগ্নি করব? তাঁর বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন সারা দেশে কী পরিমাণ আটা-ময়দা প্রয়োজন হয় তা নিয়ে তার কি কোনও ধারণা আছে? বিষয়টি বিস্তারিত জানলে তবেই সমগ্রটি স্পষ্ট হবে।

2011 সালের নভেম্বরে মেগাস্টার ফুডস প্রতিষ্ঠা হয়। 2018 সালের 24মে সংস্থা বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের SME প্ল্যাটফর্মে নথিভুক্ত হয়। 2022-এর 16 ফেব্রুয়ারি এই সংস্থা NSE ও BSE উভয় শেয়ার বাজারেই নথিভুক্ত হয়। সংস্থা মূলত ময়দা, আটা, ময়দা ও আটার বিবিধ পণ্য এবং অগার্নিক ময়দার মতো পণ্য সরবরাহ করে থাকে।

মেগাস্টার এমনই একটি সংস্থা যেটি ব্রিটিশ রিটেল কাউন্সিল বা BRC-তে নথিভুক্ত। সারা দেশ এমন মাত্র দুটি সংস্থাই আছে। উত্তর ভারতে এই সংস্থার সবচেয়ে বড় গম কারখানা রয়েছে। এই কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা এক লক্ষ টন। সংস্থার কারখানা পঞ্জাবের রোপার জেলায় অবস্থিত। এই কারখানা হল একমাত্র কারখানা যেখানে অত্যাধুনিক বুলার মেশিন রয়েছে। রোপার জেলার এই কারখানায় দৈনিক 350 টন ময়দা প্যাকেটজাত হতে পারে এবং 16,000 টন ময়দা মজুত করা যেতে পারে।

মেগাস্টার ফুডসের কর্ণধার বিকাশ গোয়েলের এই ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা 36 বছরের। সংস্থার ক্লায়েন্টের মধ্যে রয়েছে নেসলে, ITC, হিন্দুস্থান ইউনিলিভার, জুবলিয়েন্ট ফুডওয়ার্কস, পিজ্জা হাট, KFC, ইয়াম ফুডস, মন্ডেলেজ়, হরলিক্স, ক্যাডবেরির মতো সংস্থা। সংস্থার মোট ব্যবসার এক চতুর্থাংশ বা 25% আসে নেসলে ইন্ডিয়া থেকে। এর মধ্যে 15% আসে সাধারণ ময়দা থেকে আর 10% আসে প্রিমিয়াম ময়দা ও ময়দাজাত পণ্য থেকে।

ডোমিনোজ, পিজ্জা হাট, কিটক্যাট এবং নেসলে বেবি ফুডসের মতো সংস্থার যে পরিমাণ আটা-ময়দার প্রয়োজন হয় তার 100% মেগাস্টার ফুডস থেকে আসে। মন্ডেলেজ়ের মোট চাহিদার 70%-ই সরবরাহ করে এই সংস্থা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সবকটি পিৎজা হাট আউটলেটে এই সংস্থাই আটা-ময়দা সরবরাহ করে থাকে। আরেক প্রখ্যাত পিৎজা চেন লা পিনোসেও মেগাস্টার ফুডসের পক্ষ থেকে সিংহভাগ আটা-ময়দা সরবরাহ করা হয়। এর পাশাপাশি, মাল্টিগ্রেন বিস্কুট তৈরিতে যে ব্রান ব্যবহৃত হয়, তা এই সংস্থাই সরবরাহ করে থাকে।

বর্তমানে সংস্থার মোট রাজস্বের 25% আসে প্রিমিয়াম ময়দা বিক্রি থেকে। আগামী দু-বছরের মধ্যে এই পরিমাণ দ্বিগুণ করে 50%-এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কুইক সার্ভিস রেস্টোরেন্ট সংস্থাগুলির উপর ভরসা করে সংস্থা এই ক্ষেত্রে দেশের সেরা হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে।

এটা তো হল সংস্থার ব্যবসা। এবার দেখা যাক সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।

সংস্থা তার বর্তমান গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে এবং নতুন গ্রাহক ধরতে সংস্থা শীঘ্রই দৈনিক 350 টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কারখানা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। এর জন্য প্রায় 60 কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর মধ্যে 25 কোটি টাকার সংস্থান হবে বাজার থেকে ঋণ করে। আর 20 কোটি টাকা নিজের ফান্ড থেকে দেবে সংস্থাটি।

এই সংস্থার যে বাজার তাতেও প্রতিযোগীর সংখ্যা খুবই সীমিত। কারণ মেগাস্টার ফুডস যে সব সংস্থায় পণ্য সরবরাহ করে থাকে তার বেশিরভাগই কাস্টমাইজড। ফলে তাঁদের ব্যবসায় মন্দা আসার সম্ভাবনাও খুব কম। তবে সংস্থার সামনে যে চ্যালেঞ্জ নেই তা নয়। এর অন্যতম হল প্রতি বছর এপ্রিলে সংস্থাটি গম কিনে থাকে। মুদ্রাস্ফীতি, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা প্রভৃতির কারণে প্রতিবছর খরচ এক হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর এবং চলতি বছরে গমের দাম উর্ধ্বমুখী থাকবে। ফলে সংস্থার লাভের উপর অনেকটাই প্রভাব পড়বে।

এবার দেখা যাক সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্যের কী হাল সেই বিষয়টি।

2023-24 অর্থবর্ষে সংস্থার মোট ব্যবসার পরিমাণ 268 কোটি টাকা। কর, সুদ দেওয়ার আগে লাভের পরিমাণ 21 কোটি টাকা এবং মুনাফার পরিমাণ 10 কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে সংস্থার পণ্য বিক্রির পরিমাণ 123 কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে 140 কোটি টাকা। আর এই সময়ের মধ্যে সংস্থার লাভের পরিমাণ 2.87 কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে 4.11 কোটি টাকা।

এছাড়াও, সংস্থা বিশেষ কিছু ধরনের ময়দার ক্ষেত্রে লাভের হার বাড়িয়ে 10% করেছে। যা সাধারণ ময়দার ক্ষেত্রে 5%-6%। যদি সংস্থা তার ক্ষমতা সম্প্রসারণ করে তাহলে আগামী দু-বছরের মধ্যে সংস্থার লাভের হার অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। চলতি অর্থবর্ষে সংস্থার ব্যবসার পরিমাণ হতে পারে 312 কোটি টাকা। আর পরের অর্থবর্ষে এই পরিমাণ হতে পারে 425 কোটি টাকা। একইভাবে আগামী দুটি অর্থবর্ষে সংস্থার লাভের পরিমাণ হতে পারে যথাক্রমে 13 কোটি টাকা ও 16.7 কোটি টাকা। সংস্থার EPS বা শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়াতে পারে 13 টাকা ও 16.7 টাকা।

সংস্থার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বলাই যায় এই সংস্থায় লগ্নি করার কথা ভাবা যেতেই পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী 18 মাসের লক্ষ্যমাত্রা নিলে বলাই যায় মেগাস্টার ফুডস 450 টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। ফলে এখন লগ্নি করলে আপনি লাভ পেতেই পারেন।

Published: December 7, 2023, 14:19 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App