হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ড: আগ্রাসী, রক্ষণশীলও

হাইব্রিড ফান্ড ইক্যুইটি ও ডেট ফান্ডের সংমিশ্রণের ফলে সবসময়ই একটা ঝুঁকি থাকে। তবে তা খুব একটা বেশি হয় না।

মুরারিপুকুরের তন্ময় লগ্নির ক্ষেত্রে খুব একটা ঝুঁকি নিতে একেবারেই রাজি নন। বরং তিনি এই ক্ষেত্রে একটা সাম্যবস্থা বজায় রাখতেই পছন্দ করেন। এই ধরনের লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ড একটি ভাল বিকল্প। আপনি যদি ডেট ফান্ডের চেয়ে বেশি রিটার্ন চান আবার ঝুঁকি নিতে একেবারেই ইচ্ছুক না হন তাহলে হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। মোট ছরকমের হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমানে বাজারে আছে। এর মধ্যে রয়েছে মাল্টিঅ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড, এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড, ডায়নামিক অ্যাসেট অ্যালোকেশন বা ব্যালেন্সড অ্যাডভানটেজ ফান্ড, কনজারভেটিভ হাইব্রিড ফান্ড, ইক্যুইটি সেভিংস ফান্ড এবং আর্বিট্রাজ ফান্ড।

এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড বাকি পাঁচ রকমের হাইব্রিড ফান্ড থেকে ভাল রিটার্ন দিয়ে থাকে। যদি আমরা 27 অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের হিসেব দেখি তাহলে দেখব শেষ তিন বছরে হাইব্রিড ফান্ড গড়ে 17% হারে রিটার্ন দিয়েছে। পাঁচ ও দশ বছরের মেয়াদে এই ফান্ডের রিটার্নের হার যথাক্রমে 13% 13.5%

এখন দেখা যাক কেন এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড কেন ভাল রিটার্ন দেয়। প্রথমেই জানা যাক এই ধরনের ফান্ড কী? SEBIএর নিয়ম অনুসারে হাইব্রিড ফান্ডের মোট সম্পদের 65-80% ইক্যুইটি ক্ষেত্রে লগ্নি করা হয়। আর বাকি 20-35% ডেট বা সরকারি ঋণপত্রে লগ্নি করা হয়। তবে ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করলে তার ঝুঁকির পরিমাণ অনেকটাই বেশি।

যখন শেয়ার বাজার অনেকটাই উপরে থাকে তখন এই ধরনের ফান্ড বেশি রিটার্ন দেয়। যার ফলে লগ্নিকারীরা দীর্ঘমেয়াদে ভাল অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন। আবার যখন শেয়ার বাজার নিচের দিকে থাকে তখন ডেট ফান্ডের স্থিতিবস্থা ও নিয়ন্ত্রিত রিটার্ন আপনার চিন্তা দূর করে।

এর উপর কর কী ভাবে লাগু হয় এবার সেটা দেখা যাক।

হাইব্রিড ফান্ডগুলিকে সাধারণত ইক্যুইটি ফান্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়। সেই কারণে তাদের উপর ইক্যুইটি ফান্ডের মতই কর লাগু হয়। আপনি যদি এক বছরের মধ্যে লগ্নি ভাঙিয়ে ফেলেন তাহলে 15% হারে প্রযোজ্য হবে। আর যদি এক বছরের পর তা করেন, তাহলে মোট লাভের পরিমাণ যদি এক লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে সেই টাকার উপর 10% হারে কর লাগু হয়ে থাকে।

এবার দেখা যাক এই ফান্ডে লগ্নি করা উচিত কি না?

তাই যে সব লগ্নিকারীরা কিছুটা ঝুঁকি নিতে আগ্রহী অথবা নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য পূরণ করতে চান তাঁরা স্মলক্যাপ কিংবা মিডক্যাপের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ফান্ডে টাকা না রেখে হাইব্রিড ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। শেয়ার বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই তেজিভাব রয়েছে। তাই যে লগ্নিকারীরা তিন বছর বা তার বেশি মেয়াদে লগ্নি করতে চান তাঁদের জন্য এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড ভাল বিকল্প। আমরা যদি 27 অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব দেখি তাহলে দেখব এই ধরনের ফান্ডে তিন বছরের মেয়াদে রিটার্নের হার 17%

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাজারের যা অস্থির অবস্থা তা সত্ত্বেও ভারতের বাজার বিশ্বের অন্য বাজারগুলির তুলনায় ভাল রিটার্ন দিচ্ছে এবং লগ্নির পরিমাণও উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর কারণ হল, দেশের বাজারের প্রতি দেশি ও বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা। সেই কারণেই খারাপ সময়েও বাজারের মূল ভিত্তি শক্তিশালীই রয়েছে। কিন্তু কোনওকিছুই একেবারে ঝুঁকিমুক্ত নয়। ফলে এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ডে লগ্নি করা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ।

হাইব্রিড ফান্ড ইক্যুইটি ও ডেট ফান্ডের সংমিশ্রণ। ফলে এই ধরনের ফান্ডে সবসময়ই একটা ঝুঁকি থাকে। তবে ঝুঁকির পরিমাণ খুব একটা বেশি হয় না। তাই তন্ময়ের মতো লগ্নিকারীদের উচিত এগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ডে লগ্নি করা তাতে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক লক্ষ্য পূরণও যেমন করা সম্ভব তেমনই বেশি ঝুঁকি নিয়ে পরবর্তীতে ঢোবার সম্ভাবনাও খুব কম।

Published: November 17, 2023, 12:52 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App