PE ও PEG: কাকে বলে, কেন দেখবেন

এই রেশিওটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সাধারণত কোনও কোম্পানির বৃদ্ধির গতি খুব বেশি হলে তার PE multiple-ও বেশি হয়ে থাকে।

সম্প্রতি নিফটি 18,860 পয়েন্টের নীচে নেমে গিয়েছিল। যদিও সেখান থেকেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সূচক। গত 26 অক্টোবরের সাম্প্রতিক পতনের সর্বনিম্ন স্তর থেকে প্রায় 600 পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে সূচক।

এদিকে, গত 28 মার্চ নিফটি নেমে এসেছিল 16,913.75 পয়েন্টে। সেখান থেকে সূচক প্রায় 2,500 পয়েন্ট বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কি নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন আছে?

PE মাল্টিপল বেশি এমন সমস্ত শেয়ারের ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে কি বেশি সতর্ক হওয়া উচিত?

আর কারও পোর্টফোলিওতে এই ধরনের শেয়ার থাকলে তাঁর কী করা উচিত? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

মূল আলোচনা শুরুর আগে জেনে নেওয়া যাক PE মাল্টিপল কী।

PE মাল্টিপল, অর্থাৎ price to earnings multiple, যাকে আমরা PE রেশিও হিসেবেও জানি।

EPS বা শেয়ার পিছু আয়ের তুলনায় একটি শেয়ার কতগুণ দামে ট্রেড করছে তা বোঝা যায় PE multiple থেকে।

বিষয়টিকে আমরা একটু অন্যভাবেও ব্যখ্যা করতে পারি। কোনও কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য আমরা তার EPS-এর তুলনায় কত গুণ বেশি দাম দিতে ইচ্ছুক।

ধরা যাক, কোনও একটি কোম্পানির EPS 10 টাকা এবং শেয়ারের দাম 100 টাকা হলে ওই কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য লগ্নিকারীরা PE মাল্টিপলের দশগুণ দিচ্ছেন।

এই যেমন অরবিন্দের কথাই বলা যাক। উনি সবসময় ভ্যালুয়েশন দেখে কোনও শেয়ার কেনা বা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এখন তিনি Nifty-50 index এবং নিফটির পঞ্চাশটি কোম্পানির PE multiple-এর উপরে বিশেষ নজর রাখছেন।

কারণ নিফটির 50টি স্টকের মধ্যে 29টির PE মাল্টিপল ইনডেক্সের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে, শীর্ষ ন’টি কোম্পানির PE মাল্টিপল 55 গুণেরও বেশি এবং দু’টি কোম্পানি 100 গুণের বেশি মাল্টিপলে ট্রেড করছে। এই দুই কোম্পানি হল অ্যাপোলো হসপিটালস এবং আদানি এন্টারপ্রাইজেস।

কিন্তু দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের রেজাল্টের পর বিদেশি ব্রোকারেজ হাউস Morgan Stanley ওভারওয়েট রেটিং বজায় রেখেছে। সেইসঙ্গে টার্গেট প্রাইস বাড়িয়ে 6,101 টাকা করেছে। যখন স্টকটি প্রায় 5,150 টাকা লেনদেন করছে।

শুধু তাই নয়, প্রথম ত্রৈমাসিকের ফলাফলের পরে অ্যাপোলো হসপিটালের টার্গেট প্রাইস বাড়িয়েছে দু’টি ব্রোকারেজ হাউস Jefferies এবং Goldman Sachs.

আর এই গোটা বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই অরবিন্দ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। কিছুতেই তাঁর মাথায় ঢুকছে না যে, একটি কোম্পানির PE মাল্টিপল এত বেশি হওয়ার পরেও কোনও ব্রোকার কীভাবে বর্তমান মূল্যের থেকে বেশি টার্গেট প্রাইস দিতে পারে? অর্থাৎ, বেশি PE-সহ স্টকগুলিতেও কি লগ্নি করা যেতে পারে?

যে কারণে Swastika InvestMart-এর গবেষণা প্রধান সন্তোষ মীনা মনে করেন, কোনও শেয়ারে বিনিয়োগ করার সময় শেয়ারটির PE-কে এর EPS গ্রোথের সাথে তুলনা করে দেখা উচিত। আমরা জানি যে PE এবং EPS growth-এর রেশিওকেই Earnings Growth বা PEG ratio বলা হয়।

এই রেশিওটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সাধারণত কোনও কোম্পানির বৃদ্ধির গতি খুব বেশি হলে তার PE multiple-ও বেশি হয়ে থাকে। যে কারণে এই রেশিও দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মীনা আরও জানিয়েছেন যে, PEG রেশিও একের কম হলে তা খুব ভালো বলে মনে করা হয়। কিন্তু ভারতের মতো হাই-গ্রোথ ইকোনমিতে একের কম PEG রেশিও-সহ একটি ভালো স্টক খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।

এই পরিস্থিতিতে অরবিন্দ বেশি PE মাল্টিপল-সহ প্রচুর স্টক কিনেছেন। কারণ তিনি শুধুমাত্র বিগ স্টকে লগ্নি করতে পছন্দ করেন। তবে বাকি 21টি কোম্পানির ক্ষেত্রে কী অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন তাও তাঁকে বুঝতে হবে।

কারণ তিনি সবসময় কম ভ্যালুয়েশনের স্টকের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন।

কম ভ্যালুয়েশনের স্টকের উপরে আলোকপাত করলে দেখা যাবে এমন ন’টি শেয়ার রয়েছে যেগুলির PE পনেরোর নীচে এবং ভ্যালুয়েশন নিফটির থেকে কম।

তাই এখন বড় প্রশ্ন হল যে সমস্ত স্টকের PE নিফটির থেকে বেশি, সেই সমস্ত স্টক সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনিয়তা আছে কি-না? সেইসঙ্গে যে সমস্ত স্টকের PE কম সেগুলির ক্ষেত্রে কী ধরণের কৌশল গ্রহণ করা উচিত?

সন্তোষ মীনা মনে করেন, বিগত কয়েকটি ত্রৈমাসিকে খারাপ ফলাফলের কারণে একটি স্টকের PE বেশি হতে পারে। ঠিক যেমনটি ঘটেছে অ্যাপোলো হসপিটালসের ক্ষেত্রে।

আদানি এন্টারপ্রাইজেস এবং HDFC লাইফের শেয়ারের দামও চড়া।

টাইটানের স্টকের দাম একটু চড়া হলেও আগামীদিনেও এটি বার্ষিক 10-12% হারে রিটার্ন দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে এয়ারটেলের আউটলুকও ভালো। BPCL, Tata Motors এবং IndusInd Bank হল কম PE সহ আকর্ষণীয় স্টক। যাইহোক, IndusInd ব্যাঙ্কের মতো ব্যাঙ্কিং শেয়ারগুলি প্রাইস টু বুক ভ্যালু অনুযায়ী মূল্যায়ন করা উচিত৷ 6 মাসের দৃষ্টিকোণ থেকে, 20-25 শতাংশ রিটার্ন প্রত্যাশিত। কিন্তু 2-3 বছরের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ করা আরও ভাল হবে।

তাই অরবিন্দের প্রশ্নের উত্তর থেকে আমরা বলতে পারি যে কোনও কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই ভ্যালুয়েশনের দিকে নজর দিতে হবে। এবং PE বেশি এমন সমস্ত শেয়ারে বিনিয়োগের আগে সতর্ক হতে হবে।

কিন্তু PE মাল্টিপল বেশি হলেই স্টক বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত নয়, গড়পড়তা এমন ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

PE মাল্টিপলের পাশাপাশি একটি কোম্পানির PEG রেশিওর দিকেও নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

Published: November 16, 2023, 13:12 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App