ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড মানেই বিরাট রিটার্ন নয়

আপনি কতদিন ধরে লগ্নি করবেন তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। কারণ ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণ দীর্ঘমেয়াদে হলে লগ্নিকারীর পক্ষে ইতিবাচক।

জোড়াসাঁকোর মহুয়া একটি ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করে ফাঁপড়ে পড়েছেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই ফান্ডে লগ্নি করতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু সভয়ে লক্ষ্য করেন যে মেয়াদ শেষেও সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ওই ফান্ড। মহুয়া ভেবেছিলেন ইক্যুইটি ফান্ড হওয়ার কারণে তিনি ভাল রিটার্ন পাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তা হয়নি। ইক্যুইটি ফান্ড সকলের জন্য উপযুক্ত নয়, সেটা প্রথমেই বোঝা উচিত।

বর্তমানে বাজারে 400-র বেশি ইক্যুইটি ফান্ড রয়েছে। এর ফলে ভুল হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। দেখা যাক এই ধরনের ফান্ডে লগ্নি করার আগে কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে।

প্রথমত, আপনি কতদিন ধরে লগ্নি করবেন তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। কারণ ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণ দীর্ঘমেয়াদে অর্থাৎ পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদে হলে লগ্নিকারীর পক্ষে ইতিবাচক। এর চেয়ে বেশি মেয়াদে লগ্নি করতে চাইলে আপনি এই ধরনের ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন।

কিন্তু আপনি যদি স্বল্প মেয়াদে লগ্নি করতে চান তাহলে এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ ঝুঁকির হতে পারে। এই ঝুঁকি দীর্ঘমেয়াদে অনেকটাই কম হয়ে যায়। স্বল্প মেয়াদে লগ্নি করার জন্য ডেট ফান্ড একটি ভাল বিকল্প। কারণ এই ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ অনেকটাই কম হয়।

দ্বিতীয়ত, আপনার ঝুঁকির খিদে সম্পর্কে জানুন। ঝুঁকি ও পুরস্কার প্রায় সবসময় হাতে হাত ধরে আসে। অর্থাৎ আপনি যত ঝুঁকি নেবেন ততই বেশি লাভের সুযোগ পাবেন। যে সব লগ্নিকারী বেশি ঝুঁকি নিতে পারেন তাঁরা মিড কিংবা স্মলক্যাপে ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করে থাকেন। অন্যদিকে, লার্জক্যাপ ইক্যুইটি ফান্ডগুলি সাধারণত বড় সংস্থাগুলিতে লগ্নি করে, যেখানে ঝুঁকির পরিমাণ অনেকটাই কম হয়ে থাকে।

এর থেকে স্পষ্ট বিভিন্ন রকমের ইক্যুইটি ফান্ডের রিটার্নের হারও ভিন্ন। আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও লগ্নির পরিমাণ অনুযায়ী আপনাকে ফান্ড বাছতে হবে।

তৃতীয়ত, ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও নজরে রাখুন। এক্সপেন্স রেশিও অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড চালাতে সংস্থার কী খরচ হচ্ছে তার অনুপাত। প্রতিটি ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, ইক্যুইটি ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিওর হার 2.25% পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই লগ্নিকারীদের এই দিকটি দেখে তারপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

চতুর্থত, ফান্ডের গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স দেখুন। আপনি যখন কোনও ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবেন তখন আপনাকে সেই ফান্ডের রিটার্ন, বৈশিষ্ট্য সব ভাল করে খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি, এর উপর কীভাবে কর প্রযোজ্য হয় সেটিও দেখে নিতে হবে। এসব দিক খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য এই ফান্ড আদৌ উপযুক্ত কি না।

তাই প্রতিটি ফান্ডে লগ্নির আগে ওই ফান্ডের আগের কয়েক বছরের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখা অবশ্যই দরকার। কারণ তাহলে বোঝা যাবে কোন ফান্ড আপনার জন্য উপযোগী আর কোনটি নয়। পাশাপাশি, ফান্ড ম্যানেজারের ট্র্যাক রেকর্ড ও ওই হাউজের সমগোত্রীয় ফান্ডগুলির পারফরম্যান্স কেমন সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

পঞ্চম, লগ্নি শুরু করার বয়স। অর্থাৎ ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে আপনি যত আগে থেকে লগ্নি শুরু করবেন ততই আপনি বড় অঙ্কের তহবিল তৈরি করতে পারবেন। তাই আপনার লগ্নি যদি দীর্ঘমেয়াদে হয়ে থাকে তাহলে যতটা পারবেন ততই দ্রুত এই লগ্নি শুরু করুন। তাতে আপনারই সুবিধা হবে।

যদি আপনি একটা বড় অঙ্কের তহবিল তৈরির সঙ্গে সঙ্গে করছাড়ের সুবিধা পেতে চান তাহলে আপনি ট্যাক্স সেভিংস ELSS ফান্ড বাছতে পারেন। কারণ এই ক্ষেত্রে লগ্নি করলে আয়কর আইনের 80C ধারায় করছাড় পাওয়া যায়।

এটা বলাই যায় মহুয়ার মতো লগ্নিকারীদের আগে থেকে সংশ্লিষ্ট ফান্ড সম্পর্কে সব বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তারপরেই লগ্নি করা উচিত। তাহলে তাঁরা অযথা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন না। অন্যথায় লগ্নি করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তারপরেই এগোনো উচিত।

Published: November 1, 2023, 13:37 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App