সোনায় লগ্নি: অনিশ্চিত বাজারেও ভরসা করতে পারেন

সভরেন গোল্ড বন্ডের উপর করের বোঝাও খুব কম। পাশাপাশি, আপনি বার্ষিক আড়াই শতাংশ হারে সুদও পাবেন।

কার্তিক সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু সম্প্রতি সোনার দাম একলাফে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি চিন্তিত। এই খাতে তিনি লগ্নি কি আদৌ করবেন, তা নিয়েই এখন তাঁর চিন্তা।

এই উৎসবের মরশুমে এমনিতেই দেশে সোনা বিক্রি অনেকটাই বাড়ে। কিন্তু কার্তিক সেই ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দিতে চান না। কারণ তা সুরক্ষিত রাখার জন্য ঝামেলা কমবে বই বাড়বে না। তাঁর বন্ধু হরিশ সেই সময়ই তাঁকে গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করার পরামর্শ দেন। যেখানে লগ্নি করলে তিনি সোনা ও মিউচুয়াল ফান্ড উভয়েরই সুবিধা পাবেন। একথা শুনে কার্তিক যারপরনাই খুশি।

কিন্তু আগে কার্তিকের জানা উচিত গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড কী আর কার্তিকের কি এই ফান্ডে লগ্নি করা উচিত?

গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড হল সেই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড যারা তাদের ফান্ডের মোট অর্থের একটা বড় অংশ সোনার সংস্থাগুলিতেই লগ্নি করে। অর্থাৎ এই টাকা সরাসরি সোনায় লগ্নি করা হয় না। তা ঘুরপথে করা হয়।

বেশিরভাগ ফান্ডই গোল্ড ETF-এ লগ্নি করে থাকে। বেশ কিছু ফান্ড তাদের মোট ফান্ডমূল্যের 100%-ই এই ধরনের ETF-এ লগ্নি করে। সোনায় লগ্নিকে সবসময়ই নিরাপদ ও সুরক্ষিত হিসেবেই গণ্য করা হয়।

গত এক বছরে সোনা প্রায় 19% রিটার্ন দিয়েছে। আর তিন বছরের মেয়াদে রিটার্নের হার 17%। দেশের অর্থনীতির ওঠাপড়ার ওপর সোনার রিটার্ন একেবারেই নির্ভরশীল নয়। সোনা সবসময়ই লগ্নির ভাল ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। সোনা কখনই আপনাকে ক্ষতির মুখে ফেলবে না।

বিশেষ করে শেয়ার বাজারের ওঠাপড়ার সময় সোনার গুরুত্ব আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এখন গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডের বৈশিষ্ট্যগুলি একনজরে দেখে নেওয়া যাক। গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করা সাধারণ সোনার লগ্নির চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও সুরক্ষিত। দ্বিতীয়ত, আপনি এই ক্ষেত্রে মাত্র এক হাজার টাকা থেকেই লগ্নি শুরু করতে পারেন।

গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে হলে আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র একটি ফর্ম ফিলাপ করেই আপনি এই ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। তবে গোল্ড ফান্ডের লকইন পিরিয়ডের মধ্যে তা ভাঙালে আপনাকে এক্সিট লো়ড দিতে হবে। এছাড়াও, এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য একটি ফি দিতে হয়। যাকে এক্সপেন্স রেশিও বলা হয়। এর ফলে আপনার মোট রিটার্নের পরিমাণ খানিকটা কমে যায়। যার ফলে লগ্নির খরচ আখেরে বেড়ে যায়। গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডগুলি আসলে গোল্ড ETF-এ লগ্নি করে থাকে। আর প্রতিটি ETF-এর এক্সপেন্স রেশিও আলাদা হয়।

আমরা যদি গোল্ড ফান্ডগুলির শেষ পাঁচ বছরের রিটার্ন দেখি তাহলে দেখব বাজারের ওঠাপড়া সত্ত্বেও এগুলি 10%-এর বেশি রিটার্ন দিয়েছে। তবে ডেট ফান্ডের মতই গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে কর লাগু হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদ ও স্বল্পমেয়াদ উভয় ক্ষেত্রেই এই কর লাগু হয়।

এখান থেকে প্রাপ্ত লাভ লগ্নিকারীর আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। তারপর নির্দিষ্ট কর কাঠামো অনুযায়ী তার উপর কর প্রযোজ্য হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হল গোল্ড ফান্ডে লগ্নি করা কি যুক্তিযুক্ত?

আর্থিক বিশেষজ্ঞ বলবন্ত জৈন বলেন, যদি কেউ ডিজিটাল গোল্ডে লগ্নি করতে চান তাহলে গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড একটি ভাল বিকল্প। কিন্তু অন্য পথগুলিও খতিয়ে দেখা উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সভরেন গোল্ড বন্ড। লগ্নির জন্য এটি একটি আদর্শ বিকল্প।

সভরেন গোল্ড বন্ডের উপর করের বোঝাও খুব কম। পাশাপাশি, আপনি বার্ষিক আড়াই শতাংশ হারে সুদও পাবেন। ফলে সবদিক থেকে দেখলে এই গোল্ড বন্ড সত্যিই লাভজনক লগ্নির বিকল্প, মন্তব্য বলবন্তের।

পাশাপাশি, আপনি যদি সোনায় লেনদেন করতে চান তাহলে গোল্ড ETFএ লগ্নি করা যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি সোনায় লগ্নি করে লাভ ঘরে তুলতে চান তাহলে গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতেই পারেন। এই বিকল্প দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে সুবিধাই দেবে। তবে আপনার মোট পোর্টফোলিওর সর্বাধিক 10% এই খাতে লগ্নি করা যেতে পারে।

Published: October 31, 2023, 13:47 IST

পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App