চিনি সংস্থাগুলির শেয়ার উৎসবের মরশুমে আরও মিষ্টি হচ্ছে। এই ধরনের বেশিরভাগ সংস্থার শেয়ার গত তিন মাসে ভালই রিটার্ন দিয়েছে। এই খবরে ভবানীপুরের সঞ্জীব যারপরনাই খুশি। কারণ তিনি এই ধরনের সংস্থায় বেশি বিনিয়োগ করেছেন। তবে এই খুশীর মধ্যেও সঞ্জীবের মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে।
প্রথমত, এখনও কি এই শেয়ারগুলিতে লগ্নি করা যেতে পারে। এই শেয়ারগুলিকে এখন কী করা যেতে পারে। এল নিনোর কারণে চিনির উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। 2021-22 চিনিবর্ষে ভারত বিশ্বের মধ্যে প্রথম চিনি উৎপাদক দেশ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিল। চিনির কল থেকে সেই বছর প্রায় 3.6 কোটি টন চিনি উৎপান হয়েছে। কিন্তু প্রখ্যাত রেটিং সংস্থা Care Edge-এর এক সমীক্ষা অনুসারে চলতি চিনিবর্ষে 3.4 কোটি টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। তবে চূড়ান্ত পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে ইথানলের জন্য চিনি সরিয়ে রাখার পর। তবে শুধু এটাই নয় 2023-24 চিনিবর্ষে এই উৎপাদনের পরিমাণ আরও কমে হতে পারে 3.17 কোটি টন বলেই পূর্বাভাস করেছে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে এটাও পূর্বাভাস করা হয়েছে যে শুধু ভারতেই নয় সারা বিশ্বেই চিনা উৎপাদন এই চিনিবর্ষে কমতে পারে। এই উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণ হতে পারে 54 লক্ষ টন।
পাশাপাশি আখের কম উৎপাদন চিনির দাম বাড়াতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পালন করে থাকে। সেই কারণেই চিনির দাম গত 6 বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে। ফলে আসন্ন উৎসবের মরশুমে চিনির দাম আরও খানিকটা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এটা চিনি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির জন্য ভাল খবর। সেই কারণে চিনি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ইথানল প্রস্তুতের জন্য আখ ব্যবহার করছে। এতে তাদের লাভের পরিমাণ অনেকটাই বাড়ছে। ফলে তাদের মুখের হাসিও যেমন চওড়া হয়েছে তেমনই পকেটও ভরেছে।
ISMA-এর মতে, 2022-23 চিনিবর্ষে ইথানল তৈরিতে 45 লক্ষ টন চিনি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই কারণে চিনি কলগুলির আয়ের পরিমাণ 8%-12% পর্যন্ত বাড়তে পারে। বাজাজ হিন্দুস্থান সুগারের শেয়ার গত তিন মাসে 47% রিটার্ন দিয়েছে। আর এক বছরের মেয়াদে 124% রিটার্ন দিয়েছে। উত্তম সুগার মিলস তিন মাসের মেয়াদে 29% ও এক বছরের মেয়াদে 57% রিটার্ন দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর চিনির কম উৎপাদনের কারণে এই সংক্রান্ত সংস্থার শেয়ার ভাল ফল করেছে। সিস্টেমেটিক্স ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজ পরামর্শ দিয়েছে বলরামপুর চিনি, দ্বারিকেশ সুগার এবং ত্রিবেণী ইঞ্জিনিয়ারিং–এর মতো সংস্থাগুলির শেয়ার কেনা যেতে পারে।
অন্যদিকে, মন্ত্রী ফিনমার্টের প্রতিষ্ঠাতা অরুণ মন্ত্রী বলেন, চিনির শেয়ারগুলি সাধারণত ফসলের উৎপাদনের উপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই পরিস্থিতির অনেকটাই বদল হয়েছে। কারণ সংস্থাগুলি এখন চিনির চেয়ে ইথানল প্রস্তুত করতে বেশি উৎসাহী। কারণ তাতে লাভের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়। তবে খারাপ আবহাওয়া ও কম উৎপাদনের কারণে সম্প্রতি চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। এর প্রভাব সংস্থার আয়ের উপর পড়েছে। তাই বর্তমানে এই ক্ষেত্রের পরিস্থিতি যারা দীর্ঘমেয়াদে লগ্নি করতে চান তাঁদের জন্য ইতিবাচক।
অরুণ মন্ত্রীর পরামর্শ, ত্রিবেণী ইঞ্জিনিয়ারিং, বলরামপুর চিনি, উত্তম সুগার এবং এই ক্ষেত্রের অন্য সংস্থার শেয়ারগুলিতে এখন লগ্নি করা যেতেই পারে। তাই সঞ্জীবের মত লগ্নিকারীদের জন্য পরামর্শ বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাল সংস্থার শেয়ার বাছাই করবেন। তাতে আপনারই লাভ হবে।
তবে এই ধরনের শেয়ারে চিন্তাভাবনা করে সবদিক দেখে তারপরেই লগ্নি করবেন। কারণ যে কোনও সময় চিনির চাহিদা ও যোগানের বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে, আর তা হলে শেয়ারের দামের ক্ষেত্রেও তার বড় প্রভাব পড়বে। যদি সরকার চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাহলে দেশীয় বাজারে চিনির যোগান বাড়বে। তাতে আখেরে চিনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থার শেয়ারের দামও বাড়বে। আখেরে এতে লাভ লগ্নিকারীদেরই। তা সত্ত্বেও চিনি সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করার আগে আপনি একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App