আগ্রার রবি প্রকাশ কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও তার আর্থিক সাইড এফেক্টের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি। দু-বছর হয়ে গেল কোম্পানি তাঁর বেতন বাড়েনি। মন্দের ভালো এই হল যে, এই অস্থির সময়ে কোনও রকমে তাঁর চাকরিটা রক্ষা পেয়েছিল।
নিজের জীবনের গাড়িকে কোনও রকমে টেনে নিয়ে চলা রবির মতো আরও অনেক অসংখ্য মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী আছেন যাঁরা আগামী বাজেটে সঞ্চেয়ের উপরে করছাড়ের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছেন। বিশেষ কিছু না হলেও অন্তত আয়কর আইনের ৮০(সি) ধারায় আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করা হোক, সরকারের কাছে এমনই প্রত্যাশা তাঁদের।
এখন ৮০(সি) ধারায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। ৮ বছর ধরে এই সীমা এখানেই আটকে আছে।
৮০(সি) ধারায় সর্বোচ্চ আয়কর ছাড়ের যে সীমা আছে তা একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা করলেই শেষ হয়ে যেতে পারে। ফলে সন্তানের স্কুলের ফি, হোম লোন বা জীবন বিমার বা PPF-এর মতো করছাড়ের ইনস্ট্রুমেন্টের কোনও প্রয়োজনীয়তাই থাকে না। একজন মধ্যবিত্তের কাছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
৮০(সি) ধারায় কোন কোন ক্ষেত্রে করছাড়ের সুবিধা মেলে?
৮০(সি) ধারার আওতায় বিনিয়োগ ও খরচের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বার্ষিক ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। এই তালিকায় আছে PF, দুই সন্তানের টিউশন ফি, জীবন বিমার প্রিমিয়াম এবং হোম লোনের EMI-তে মূলধনের অংশ।
সমস্ত লগ্নি ও খরচের হিসেব একত্র করলে খুব সহজেই দেড় লক্ষ টাকার সীমারেখা পার হয়ে যায়।
যে কারণে রবি প্রকাশের মতো ব্যক্তিরা ৮০(সি) ধারার সীমারেখার বাইরে লগ্নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। যার ফলে সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ধাক্কা খাচ্ছে।
কোভিডের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপুল টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে রবি প্রকাশের। তাঁর বাবাও গত কয়েক বছর থেকে অসুস্থ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় প্রতি মাসে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়।
আয়কর আইনের ৮০(ডি) ধারায় রবি নিজের ও পরিবারের হেল্থ ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়ামের উপরে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত করছাড়ের সুবিধা পান। তবে অভিভাবকরা প্রবীণ নাগরিক হলে এক্ষেত্রে করছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা বেড়ে হবে ৫০,০০০ টাকা।
যদিও রবির বক্তব্য, কেবলমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হলে ইনসিওরেন্সের ক্লেম করা যায়। কিন্তু ওষুধ বা বেসরকারি হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে চিকিৎসার জন্য তাঁর অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।
কোভিড মহামারির তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ১ কোটি টাকার আরও একটি টার্ম ইনসিওরেন্স কেনার কথা চিন্তাভাবনা করছেন রবি। কিন্তু গত এক বছরে প্রিমিয়ামের অঙ্ক বেড়েছে ৩০% পর্যন্ত। তাছাড়া কোম্পানিগুলি ক্লেম টাকা অনুমোদনের আগে যাচাইয়ের প্রক্তিয়া বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। শুধু টার্ম ইনসিওরেন্স নয়, অন্যান্য জীবন বিমা পলিসির প্রিমিয়াম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সংস্থাগুলি।
রবির মতে, করোনা মহামারী কারণে অধিকাংশ মানুষ সঞ্চয়ের গুরুত্ব আরও একবার ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আগে থেকে যদি না টাকা সঞ্চয় করতেন তবে তাঁর মতো সাধারণ মধ্যবিত্তের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা করানো হয়তো সম্ভব হত না। যে কারণে এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ের প্রতি উৎসাহিত করার প্রতি সরকারের জোর দেওয়া উচিত বলে মত রবির। যে কারণে ৮০(সি) ধারার আওতায় আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা উচিত।
২০১৪ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই ধারার আওতায় আয়কর ছাড়ের সীমা ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লক্ষ টাকা করেছিলেন। তার পর থেকে গত আট বছরে এই সীমা আর বাড়েনি। অথচ মুদ্রাস্ফীতির হার প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যে কারণে এবারের বাজেটে করছাড়ের সীমা বৃদ্ধির প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
রবি আরও মনে করেন, ৮০(ডি) ধারার আওতায় চাকরিজীবীদের ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হোক। একই হারে কর-ছাড় দেওয়া হোক বৃদ্ধ বাবা-মায়ের হেল্থ ইনসিওরেন্স প্রিমিয়ামের উপরেও। বাড়তে থাকে মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে এই টাকা খুবএকটা বেশি নয়। বিশেষত, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।
২০১০ সালের বাজেটে ইনফ্রা বন্ডে বিনিয়োগের উপরে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত করছাড়ের কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে কেবলমাত্র ২০১১-১২ আর্থিক বছরের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। রবি চান, আগামী বাজেটেও সরকার ফেল এই সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করুক এবং এবার ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করে ৫০,০০০ হাজার স্থির করা হোক। এর ফলে সঞ্চয়ের প্রতি দেশে নতুনকরে উৎসাহ দেখা দেবে। একইসঙ্গে বিপুল কর্মসংস্থান ও দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সরকারি লক্ষ্য পূরণেও তা বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
পার্সোনাল ফাইনান্স বিষয়ের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ডাউনলোড করুন Money9 App